
ছবি: জনকন্ঠ
গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বড় জামালপুর গ্রামে ইতিহাসের গর্ভে লুকিয়ে থাকা এক বিস্ময়কর নিদর্শনের নাম জামালপুর শাহী মসজিদ। উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই মসজিদটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও লোকজ অনেক কাহিনি, যা আজও এলাকাবাসীর গর্ব এবং বিস্ময়ের উৎস।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, পারস্য থেকে আগত ধর্মপ্রচারক হযরত শাহজামাল (রহঃ) ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং তাঁরই হাতে নির্মিত হয় এই মসজিদ। বিশ্বাস করা হয়, তাঁর নাম অনুসারে এই এলাকার নামকরণ হয় জামালপুর। মসজিদের পাশে থাকা হযরত শাহজামালের মাজার এবং বিশাল দীঘি আজও সেই ইতিহাসের নিরব সাক্ষী।
প্রাচীন এই মসজিদটি একসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপেক্ষায় মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। লোকবসতি না থাকায় মসজিদটি বনজঙ্গলে ঢেকে পড়ে এবং জনচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। তবে আশির দশকের শুরুতে গাইবান্ধা মহকুমার এসডিও হক্কানী কুতুবউদ্দিন স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে মসজিদের কাহিনি শুনে অনুসন্ধানে নামেন। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড ঝড়ে উপড়ে যাওয়া একটি বটগাছের নিচে মসজিদের অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সেই থেকে এলাকাবাসী একে বলেন “গায়েবী মসজিদ”।
বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় মসজিদের সামনের অংশে বারান্দা নির্মাণের মাধ্যমে মেঝে সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তবে মূল স্থাপত্য এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। কিছু অংশ ভুগর্ভে চলে গেলেও এর গম্বুজ ও দেয়ালের গাঁথুনি এখনও মসজিদের প্রাচীন সৌন্দর্য ও শিল্পকর্মের পরিচয় বহন করে।
এছাড়াও, এই এলাকায় কথিত আছে—সাত শত বছর আগে খিরোধর (গঞ্জিও) নামে এক হিন্দু রাজা ছিলেন, যিনি ছিলেন তিনটি স্টেটের মালিক। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণ যখন নীরবে সহ্য করছিল, তখন হযরত শাহজামাল চৌধুরী (রহঃ) স্বপরিবারে এখানে আগমন করেন। তাঁর আগমনের পর রাজা ও তার পাইক-পেয়াদাদের অত্যাচারের অবসান ঘটে বলেই এলাকার মানুষ মনে করে।
জামালপুর শাহী মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি একটি জীবন্ত ইতিহাস, একটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং লোককথার সঙ্গে মিশে থাকা বিশ্বাসের প্রতীক। এমন একটি স্থাপনা কালের সাক্ষ্য বহন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাস জানাতে অব্যাহত থাকুক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মুমু