ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশে পরমাণু বিজ্ঞান বিকাশে সম্ভাবনা, সংকট ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪০, ২১ মে ২০২৫

বাংলাদেশে পরমাণু বিজ্ঞান বিকাশে সম্ভাবনা, সংকট ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণার সংকট, সম্ভাবনা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বুধবার (২১ মে) বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের ড. আনোয়ার হোসেন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘বাংলাদেশে পরমাণু বিজ্ঞান বিকাশে সম্ভাবনা, সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘বাংলাদেশের সচেতন বিজ্ঞানী সমাজ’ এবং চিন্তাশীল মঞ্চ ‘ভাববৈঠকি’। সভায় দেশের পরমাণু বিজ্ঞান গবেষণায় চলমান অস্থিরতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথ খোঁজার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন দেশের খ্যাতিমান দার্শনিক, কবি ও লেখক ফরহাদ মজহার। আলোচক প্যানেলে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন।

আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম সাইফুল্লাহ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমিশনের আরেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. প্রকৌশলী শেখ মঞ্জুরা হক।

আলোচনার শেষে সভা থেকে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। সেগুলো হলো—

১. চেয়ারম্যান ও চার সদস্য সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনকে অপূর্ণাঙ্গ রেখে কিংবা চেয়ারম্যান ও সদস্যদের চলতি দায়িত্বে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে প্রকারান্তরে কমিশনকে নতজানু করার অপকৌশল পরিহার করতে হবে। 

২. কমিশনকে নীতিগত সহায়তা প্রদানের পরিবর্তে খোদ কমিশন পরিচালনার মনোভাব মন্ত্রণালয়কে পরিহার করতে হবে। ফলে সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা সহজতর হবে।

৩. উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পূর্বানুমতি, মনোনয়ন এবং জি.ও. প্রদানের এখতিয়ার কমিশনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এর ফলে পরমাণু বিজ্ঞানের বিকাশ অবাধ ও অবারিত হবে। 

৪. কমিশনের নিউক্লিয় তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত কল্পে মন্ত্রণালয় কর্তৃক সৃষ্ট বিভিন্ন সফটওয়ারে তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা দূর করতে হবে। সেই মোতাবেক কমিশনকে আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় পদমানক্রম নিশ্চিত করতে হবে। 

৬. মালিক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাথে  ‘বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি’ সম্পাদিত হতে হবে। 

৭. কমিশনের সব অস্থায়ী পদ স্থায়ীকরণ, নতুন পথ সৃজন এবং সমধর্মী প্রতিষ্ঠানের ন্যায় কিছু সুযোগ সুবিধা যেমনঃ গৃহনির্মাণ/ ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ, রেশন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুদ মুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন সুবিধাদি চালু করতে হবে।

৮. মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীর সূতিকাগার হচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। এর সুফল জনগণের দোরগোড়ায়  পৌঁছে দিতে মন্ত্রণালয়  সৃষ্ট সকল কৃত্রিম বাধা দূর করতে হবে। 

৯. ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দের অবমাননাকর অবস্থান উন্নীত করনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

১০. পরমাণু বিজ্ঞানসহ দেশের সব পর্যায়ের বিজ্ঞানের বিকাশ সাধনে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, মুক্তচিন্তার পরিবেশ তৈরিসহ মৌলিক গবেষণার পথ প্রসারিত করতে হবে।

সভায় সঞ্চালনা করেন কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. ফারিয়া নাসরীন। সভায় বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানচর্চা কেবল পেশাগত উন্নয়নের বিষয় নয়, বরং গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম ভিত্তি। তাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিদ্যমান বৈষম্য ও দমনমূলক নীতির সংস্কার এখন সময়ের দাবি। 

রিফাত

×