
ছবি: প্রতীকী
সম্প্রতি অ্যাডভোকেট মোঃ বেলায়েত হোসেন একটি ভিডিও বার্তায় জানান, এমন ১০ ধরনের জমি আছে যেগুলোর নামজারি করা থাকলেও ২০২৫ সাল থেকে সেগুলো বাতিল হয়ে যেতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি আপনার জমি এই ১০ শ্রেণির মধ্যে পড়ে এবং আপনি নামজারি করে থাকেন, তবে এখনই সচেতন না হলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। এসব নামজারি বাতিল ঠেকাতে প্রয়োজন হবে এসিল্যান্ড অফিসে ‘মিসকেস’ দায়ের করা, নতুবা জমির ওপর আপনার মালিকানা হারিয়ে যেতে পারে।
ভিডিওতে অ্যাডভোকেট বেলায়েত স্পষ্ট করেন, মিসকেস (বিবিধ মামলা) করলেই এসিল্যান্ড অফিস আইনগতভাবে ভুলভাবে করা নামজারি যাচাই করে তা বাতিলের উদ্যোগ নিতে পারে। চলুন দেখে নিই সেই ১০ ধরনের জমির নামজারির কথা, যেগুলো এখন বাতিল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রথমত, কোনো জমির ওপর যদি দেওয়ানি মামলা চলমান থাকে, এবং সেই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই কেউ নামজারি করে নেন, তবে তা বাতিল হয়ে যাবে। আদালতের এক পক্ষ যদি অন্য পক্ষকে না জানিয়ে তহসিল অফিসারকে ঘুষ দিয়ে নামজারি করিয়ে নেয়, তাহলে ভুক্তভোগী পক্ষ মিসকেস করলেই ওই নামজারি বাতিল হবে।
দ্বিতীয়ত, যদি কোনো ব্যক্তি জমির দখলে না থেকেও নামজারি করে নেয় এবং প্রকৃত দখলদার এর বিরুদ্ধে মিসকেস করেন, তবে দখলে না থাকা ব্যক্তির নামজারি বাতিল হবে। কেননা, আইনের চোখে নামজারি টিকিয়ে রাখতে হলে জমির প্রকৃত দখলও থাকতে হয়।
তৃতীয়ত, কেউ যদি নিজের অংশের তুলনায় বেশি জমি নামজারি করে নেন—যেমন ৩ শতাংশের মালিক হয়েও ৫ শতাংশ নামজারি করেন—তাহলে তা প্রতারণা হিসেবে গণ্য হবে এবং সেই অতিরিক্ত অংশের নামজারি বাতিল হয়ে যাবে।
চতুর্থত, ভুল দাগ নম্বর বা ভুল দলিলের ভিত্তিতে নামজারি করা হলে, সেটিও বাতিলের আওতায় পড়ে। অনেকে ঘুষ দিয়ে ভুল তথ্য সম্বলিত দলিল দেখিয়ে নামজারি করান, কিন্তু পরবর্তীতে যাচাই-বাছাইয়ে ভুল ধরা পড়লে এসিল্যান্ড অফিস সেই নামজারি বাতিল করে দিতে পারে।
পঞ্চমত, অর্পিত সম্পত্তি—বিশেষ করে ক তফসিলভুক্ত জমি—সরকারি সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত। কোনোভাবেই এই জমির নামজারি গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ যদি ঘুষ দিয়ে নামজারি করেও নেন, তবে সেটা অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ে যাবে।
ষষ্ঠত, খাস জমি—যেমন এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত বা ডিসির অধীনে থাকা জমি—সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন হওয়ায় এই জমির ওপরও নামজারি বৈধ নয়। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী এসব জমি ‘খাস’ হিসেবে গণ্য হয়, যা কেউ ব্যক্তিগতভাবে নামজারি করে নিতে পারবেন না।
সপ্তমত, সরকারি বা আধা-সরকারি কোনো সংস্থা যেমন রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন সম্পত্তি—এইসব সংস্থার জমিরও নামজারি করা যাবে না। কেউ করে ফেললেও তা বাতিলযোগ্য।
অষ্টমত, রেকর্ডবিহীন জমি—অর্থাৎ যার এলডিটি বা সর্বশেষ ভূমি রেকর্ড নেই—সেই জমির নামজারি কোনোভাবেই বৈধ হবে না। এমনকি কেউ আগেই নামজারি করে থাকলেও, যদি কেউ মিসকেস করে, তাহলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
নবমত, যেসব জমির প্রকৃত মালিক ভুয়া দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করেছেন বলে দাবি করা হয় কিন্তু দখল হস্তান্তর হয়নি—তেমন জমির নামজারিও টিকবে না।
দশমত, জমির মালিকানা নিয়ে গুরুতর বিরোধপূর্ণ বা অস্থির অবস্থা থাকলেও অনেকে তড়িঘড়ি করে নামজারি করান। কিন্তু পরবর্তীতে যদি প্রতিপক্ষ আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করেন, তাহলেও সেই নামজারি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন স্পষ্টভাবে বলেন, ‘নামজারি নাই মানে জমির মালিকানা নাই।’ তাই যাদের জমি এই দশটি ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে, তাদের উচিত এখনই আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে মিসকেস দায়ের করে নামজারির বৈধতা নিশ্চিত করা।
তিনি আরও জানান, সঠিক পদ্ধতিতে পুনরায় জমি নামজারি করে নিতে চাইলে যথাযথ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা, দখল নিশ্চিত করা এবং দলিলের দাগ নম্বর সঠিকভাবে মিলিয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এভাবে আপনি নিজের জমির মালিকানা আইনি স্বীকৃতির মাধ্যমে সুসংহত রাখতে পারবেন।
রাকিব