ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দখলসূত্রে অর্জিত মালিকানা বাতিল! ৩ পদক্ষেপেই বেদখলি জমি উদ্ধার-দখল হবে তাৎক্ষণিক!

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:২৯, ২১ মে ২০২৫

দখলসূত্রে অর্জিত মালিকানা বাতিল! ৩ পদক্ষেপেই বেদখলি জমি উদ্ধার-দখল হবে তাৎক্ষণিক!

ছবি: প্রতীকী

জমি বেদখল হয়ে যাওয়া আজকের সমাজে একটি সাধারণ অথচ গভীর সংকট। বিশেষ করে প্রবাসী কিংবা ব্যস্ত নাগরিক যারা জমির পাশে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে পারেন না, তারা প্রায়শই জমির কেয়ারটেকার বা আত্মীয়-স্বজনদের বিশ্বাস করে ঠকেন। শুরুতে বিশ্বস্ত মনে হলেও, পরে ওই ব্যক্তিরাই কৌশলে ভুয়া দলিল তৈরি করে জমি দখলে নেয়। আবার কেউ কেউ পেশিশক্তি প্রয়োগ করে দিনের পর দিন জোর করে জমির দখল নিয়ে রাখে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রায়শই দিশেহারা হয়ে পড়ে, আইন-আদালত, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় ঘুরেও সুরাহা পান না।

অ্যাডভোকেট মোঃ বেলায়েত হোসেন সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, মাত্র তিনটি আইনি পদক্ষেপ নিলে যে কেউ তার বেদখল জমি ফিরে পেতে পারেনতাও অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে। তিনি জানান, বর্তমান সরকার ভূমি খাতে ব্যাপক সংস্কার এনেছে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ কার্যকর করার মাধ্যমে জমি রক্ষা ও মালিকানা সুরক্ষায় একটি যুগান্তকারী ধাপ নেওয়া হয়েছে।

এই আইনের আওতায় প্রথমত, জমির প্রকৃত মালিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে পারবেন যদি কেউ অবৈধভাবে তার জমি দখল করে নেয়। ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই ও সরেজমিন তদন্ত শেষে দখলকারীকে উচ্ছেদ করে জমি প্রকৃত মালিককে ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দিতে পারেন। এই আবেদন তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, আর আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে দুবছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, যদি জমির মালিক জমির ধারে কাছেও যেতে না পারেন, তবে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় মোকদ্দমা করতে পারেন। এই ধারায় মূলত দেখা হয় কে বর্তমানে জমির দখলে আছে, এবং কে জোরপূর্বক দখলচ্যুত হয়েছে। এখানে দলিল নয়, দখলের বাস্তবতা মুখ্য বিষয়। তদন্তের জন্য থানা বা ভূমি উপ-পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে প্রতিবেদন নেওয়া হয় এবং আদালত সেই অনুসারে আদেশ দেন।

তৃতীয়ত, যদি উপরোক্ত দুটি পদক্ষেপে প্রতিকার না মেলে, তাহলে জমির প্রকৃত মালিক সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭-এর ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা করতে পারেন। এতে আদালত জমির মালিকানা ঘোষণার মাধ্যমে জমি পুনরুদ্ধারের পথ খুলে দেয়। এমনকি কেউ যদি চাকরিচ্যুত হন, ৪২ ধারার মাধ্যমে চাকরি ফিরে পাওয়ার উদাহরণও রয়েছে।

এছাড়াও নতুন আইনে ‘ভূমি সালিশ বোর্ড’ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা সীমানা নির্ধারণ, ভোগদখল, যৌথ সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখবে। পক্ষসমূহের বক্তব্য ও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বোর্ড থেকে দেওয়া আদেশ চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে, যদিও কোনো পক্ষ আদালতের আশ্রয় নিতে চাইলে তা বাধা দেওয়া যাবে না।

অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেনের মতে, আজ যারা ইউনুস সরকার এবং আইনগত সংস্কারের বিরুদ্ধে অকারণে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা মূলত নিজেরাই জমি জবরদখলকারী অথবা তাদের পৃষ্ঠপোষক। তারা ফ্যাসিস্ট শক্তির রূপ ধারণ করে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু আইনি পথেই রয়েছে এর প্রতিকার। তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, ভয় না পেয়ে শান্ত মাথায় সঠিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। জমির সুরক্ষায় এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারেন বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=M-SbEkNafHU

রাকিব

×