
ভোলার ব্রান্ড হিসেবে পরিচিতি ২ শত বছরের অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মহিষের কাঁচা দধি। এবার সেই মহিষের টক দধি জিও-গ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদ পাওয়ায় অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলেছে।
প্রাণী সম্পদ বিভাগের মতে, বর্তমানে বছরে প্রায় ৫ শত কোটি টাকার দধি বিক্রি হয়। ইতোমধ্যেই চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে খুশি মহিষ খামারি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। তবে খামারিরা বলেছেন, শুধু জিআই পণ্যের স্বীকৃতি দিলেই হবে না পাশাপাশি মহিষে সুরক্ষা ও তাদের খাবার ঘাসের অভাব দূর করতে সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। ভোলার মানুষ মনে করছে সরকারি সহযোগীতা পেলে ভোলার জনপ্রিয় টক দধি জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয়রা জানান, নদী ও সাগর উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলা জেলার চার দিকে রয়েছে অসংখ্য চরাঞ্চল। প্রাচীন কাল থেকেই এসব চরে লালন পালন করা হচ্ছে মহিষ। আর এই মহিষ পালন লাভজনক হওয়ায় অনেকেই মহিষ লালন পালন করে দুধ উৎপাদন করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। চরাঞ্চলের এসব মহিষ থেকে গোয়ালরা দুধ সংগ্রহ করে। সেই দুধ কন্টেনারে নিয়ে ট্রলার যোগে শহরের বিভিন্ন দোকানে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে সেই দুধ ছেঁকে বিভিন্ন সাইজের মাটির হাড়ি পরিষ্কার করে ঢেলে বসিয়ে দেয়। পর দিন সকালে মাটির হাড়িতে দুধ থেকে দইয়ে রুপান্তর হলে খাওয়ার উপযোগী হয় বলে জানান, ভোলা আদর্শ দধি ভান্ডারের মালিক ও খামারি আব্দুল হাই। তিনি আরো জানান,বিভিন্ন সাইজের দধি ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ শত ও চার টাকার মাটির হাড়ি বিক্রি হয়।
স্থানীয় ভোজন রসিক রায়হান বলেন, এই দধি খুবই সুস্বাদু এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার। উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের দৈনন্দিন আতিথিয়তার সঙ্গে মহিষের দুধের টক দধি জড়িয়ে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। ভোলায় বিয়ে বা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান এ দধি ছাড়া হয় না বলেই চলে। খাবারের শেষে ভাতের সঙ্গে চিনি গুড় মিশ্রন করে এই দধি খায় ভোজন প্রেমীরা। শুধু ভাতের সাথেই নয় দধি চিড়ার সঙ্গে হালকা মুড়ি ও চিনি মিশিয়ে মজা করে খাওয়া যায়। গরমের মৌসুমে দধির সঙ্গে হালকা পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করেও বিক্রি করা হয় দোকানে। এই ঘোল গরমের দিনে বেশ জনপ্রিয়। এই দধির চাহিদা শুধু ভোলাই নয়, সারা দেশ ব্যাপী। এমনকি দেশের বাইরেও অনেকে আত্নীয় স্বজনদের কাছে পাঠায়।
সম্প্রতি (৩০ এপ্রিল) জিও-গ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদ পেয়েছে ভোলার মহিষের টক দই। সেদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত থেকে এ সনদ গ্রহন করেন ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। এর আগে গত বছর (২০২৪ সালের) ২৪ সেপ্টেম্বর ভোলার মাহিষের দুধের কাঁচা দই’কে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এতে করে খুশি স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মহিষ পালনকারী ও দই ব্যবসায়ীরা। তারা বলছে এ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ভোলায় মহিষ পালনকারী ও দই ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরী হয়েছে। তবে শুধু স্বীকৃতি পেলেই হবে না, পাশাপাশি মহিষের সুরক্ষা ও খাবারের ঘাষ উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে ভোলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে রপ্তানি করা যাবে।
ভোলা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন জানান, ভোলার ৭ উপজেলায় প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে । প্রতি বছর দুই হাজার পাঁচ শত মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। বছর প্রায় ৫ শত কোটি টাকার দধি বিক্রি হয়। জেলায় সরকারি ভাবে কিল্লা রয়েছে২২টি ও বেসরকারি রয়েছে ৩টি। তিনি আরো বলেন,জিআই পণ্যের স্বিকৃতি পাওয়ার জন্য আমরা গর্বিত। মহিষের দুধ উৎপাদন কে বাড়ানোর জন্য মহিষের খাবার গানের সাথে দানাদার খাদ্য যেন দেয়া হয় তার জন্য আমরা মহিষের খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়াও গোচারন ভূমি ও ঘাস উৎপাদনের জন্য সার্বিক চেষ্টা করছি।
ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আজাদ জাহান জানিয়েছেন, মহিষের দধির সারা দেশে সহ দেশের বাইরে এর সমাদর রয়েছে। যার কারণে আমরা এই জিআই পণ্যের স্বিকৃতি পেয়েছি। এর কারনে যারা মহিষ লালন পালন করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতি হবে। এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। এই দধি দেশের বাইরে রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও দুধের দধির বাজারজাত ভালো ভাবে করতে পারে, সেই বিষয়ে ও সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যা যা প্রয়োজন সেই পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করা হবে।
এতে করে শুধু ভোলা নয়, দেশের জন্য অনেক উন্নতি বয়ে আনবে।
মুমু