ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পণ্য কিনে প্রতারিত? কোথায়, কীভাবে অভিযোগে পাবেন সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত: ০৯:০১, ২১ মে ২০২৫

পণ্য কিনে প্রতারিত? কোথায়, কীভাবে অভিযোগে পাবেন সঠিক বিচার ও ক্ষতিপূরণ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় এখনো অনেক ভোক্তা প্রতিদিনই নানা ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভুল প্যাকেটজাত পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, কেউবা আবার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অনলাইন কেনাকাটাতেও প্রতারণার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ আমাদের হাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে এসেছে। এই আইন অনুযায়ী, একজন ভোক্তা হিসেবে আপনি নিরাপদ পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার, প্রতারিত হলে অভিযোগ জানিয়ে বিচার পাওয়ার অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন।

সম্প্রতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম এক ভিডিও আলোচনায় এই আইন ও এর প্রয়োগ নিয়ে বিশদভাবে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানান, এই আইনের আওতায় পণ্য এবং সেবাদুই ক্ষেত্রেই প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। পণ্য বলতে বোঝানো হয় খোলা বা প্যাকেটজাত যেকোনো দ্রব্য, আর সেবা বলতে স্বাস্থ্যসেবা, টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পরিবহন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, যদি কোনো পণ্যে প্রস্তুত তারিখ বা মেয়াদ উল্লেখ না থাকে, পণ্যের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হয়, কিংবা অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ভুল বা নিম্নমানের পণ্য হাতে পানতাহলেও আপনি এই আইনের আওতায় অভিযোগ জানাতে পারেন এবং ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।

একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে আলামিন সাহেবের কথা বলা যায়, যিনি ঢাকার একজন বাসিন্দা। তিনি অনলাইনে ১৭ হাজার টাকায় একটি ব্র্যান্ডেড স্মার্টফোন অর্ডার করেন। কিন্তু হাতে পান একটি সস্তা চাইনিজ ফোন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (DNCRP) ওয়েবসাইটে অভিযোগ করেন এবং রিসিট, পণ্যের ছবি ও প্যাকেটের ছবি আপলোড করেন। মাত্র ১২ কর্মদিবসের মধ্যেই তার অভিযোগ যাচাই করা হয় এবং তাকে ক্ষতিপূরণসহ সঠিক পণ্য ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়।

এই অভিযোগ প্রক্রিয়া খুবই সহজ। গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায় "ভোক্তা অধিকার ও অভিযোগ" নামক একটি অ্যাপ, যেখান থেকে স্মার্টফোন ব্যবহার করেই যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। পাশাপাশি DNCRP-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রোফাইল খুলে অভিযোগ দাখিল করা যায়। অভিযোগের সঙ্গে ভোক্তার নাম, ঠিকানা, পিতামাতার নাম, ফোন নম্বর, এনআইডি নম্বর, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রমাণ হিসেবে রিসিট বা ছবিও জমা দিতে হয়। এছাড়া সরাসরি ফোন করেও অভিযোগ জানানো সম্ভব। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পণ্য কেনার ৩০ দিনের মধ্যেই অভিযোগ দাখিল করতে হবে, তা না হলে সেটি গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

আইন অনুযায়ী প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়, যার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারী ভোক্তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়। অধিকন্তু, চাইলে একই ঘটনার জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা করে পাঁচ গুণ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করাও সম্ভব। যদিও আইনে কারাদণ্ডের বিধান আছে।

তবে এই আইনের বাস্তব প্রয়োগ এবং ভোক্তার ন্যায্য অধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত, প্রতারণার শিকার হলে নির্ভয়ে এবং সঠিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগ জানানো। ভোক্তা অধিকার আইন যত বেশি বাস্তবায়িত হবে, ততই অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা কমবে এবং নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=g1iTMtl4iG8

রাকিব

×