
ছবি: প্রতীকী
বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি, যেখানে একজন নারী ও পুরুষ সারাজীবন একসাথে থাকার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু এই সম্পর্কের মাঝে যদি একজন সঙ্গী অপরজনকে অবহেলা করে দ্বিতীয় বিয়ে করে বসে, তখন সেই চুক্তির মূল উদ্দেশ্যটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
ইসলামে যদিও একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে—যেমন দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বিয়ে—তবুও প্রতিটি স্ত্রীর প্রতি সমান অধিকার, মর্যাদা ও দায়িত্ব পালনের কঠোর শর্ত রয়েছে। কাউকে ঠকিয়ে বা কারো প্রতি জুলুম করে অন্য কাউকে বিয়ে করার সুযোগ ইসলামও দেয় না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই বহুবিবাহ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইনের ৬ নম্বর ধারা প্রণীত হয়েছে, যেখানে একাধিক বিয়ে করার নিয়ম এবং অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে শাস্তির বিধান উল্লেখ রয়েছে।
আইনজীবী আবু তালহা অনিক তার ভিডিও বক্তব্যে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রাষ্ট্রীয় আইনের দৃষ্টিতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। কেউ যদি মনে করেন তার দ্বিতীয় বিয়ে করা প্রয়োজন, তাহলে তাকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরের মাধ্যমে একটি শালিশি বোর্ড গঠন করতে হবে। এই বোর্ডে আবেদনকারীর পক্ষ, প্রথম স্ত্রীর পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আবেদনকারীকে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে—যেমন স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম, মানসিক ভারসাম্যহীন, কিংবা কোনো গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত। শালিশ বোর্ড যদি এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সন্তোষজনক মনে করে, তাহলেই তারা দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দেয়।
তবে যদি কেউ এই বোর্ডের অনুমতি না পায়, অথবা মনে করে যে বোর্ড পক্ষপাতিত্ব করেছে, তাহলে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে আপিল করতে পারেন। আদালতের রায়ই হবে চূড়ান্ত। যদি কেউ এই পুরো প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলে, তবে তা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যদিও সেই বিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে বৈধ থাকবে, তবুও রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তৈরি হবে। এছাড়া, দ্বিতীয় স্ত্রী যদি সন্তান জন্ম দেয়, সেই সন্তান অবশ্যই বৈধ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভে প্রথম স্ত্রীর সন্তানের সমান অধিকারপ্রাপ্ত হবে।
এখন প্রশ্ন আসে, অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে শাস্তি কী? বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, এই অপরাধে দুটি আইনের আওতায় শাস্তি হতে পারে। একটি হলো ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা, যার অধীনে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপরটি হলো মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন ১৯৬১-এর ৬ নম্বর ধারা, যেখানে সর্বোচ্চ এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার কথা বলা হয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, যেহেতু পারিবারিক আইন একটি বিশেষ আইন, তাই এই ক্ষেত্রেই বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
তবে যদি প্রথম স্ত্রী স্বামীকে ক্ষমা করে দেন বা তাদের মধ্যে আপোষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় এবং কোনো মামলা না হয়, তাহলে আইনগত শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। কিন্তু এটি নির্ভর করে স্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপর। তাই কেউ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চান, তবে তার উচিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা, স্ত্রীকে জুলুম না করা এবং পারিবারিক শান্তি বজায় রাখা। অন্যথায়, একটি বৈধ সম্পর্কই হয়ে উঠতে পারে আইনত অপরাধ এবং সামাজিক জটিলতার উৎস।
রাকিব