
ছবি :সংগৃহীত
টেস্টোস্টেরন পুরুষের প্রধান যৌন হরমোন এবং অ্যান্ড্রোজেন হিসেবে পরিচিত।প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের প্রভাব পুরুষদের মধ্যে বেশি স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরুষের প্রজনন অঙ্গ যেমন অণ্ডকোষ এবং প্রোস্টেটের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, পাশাপাশি পেশি ও হাড়ের ভর বৃদ্ধি, শরীরের লোমের বৃদ্ধি ইত্যাদি সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্যগুলোর বিকাশে সহায়তা করে। এটি আক্রমণাত্মকতা, আকাঙ্ক্ষা, আধিপত্য, প্রেম নিবেদন এবং বিভিন্ন আচরণগত বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত। এছাড়া, টেস্টোস্টেরন স্বাস্থ্য এবং সুস্থতায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেমন মেজাজ, মস্তিষ্কের কার্যক্রম, সামাজিক ও যৌন আচরণ, বিপাক এবং শক্তির উৎপাদন, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে।
টেস্টোস্টেরনের অভাবের লক্ষণসমূহ
পুরুষদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের অভাবের ফলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:
-
শক্তির অভাব এবং ক্লান্তি
-
যৌন আকাঙ্ক্ষার হ্রাস
-
পেশি ভর হ্রাস
-
হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া
-
মেজাজের পরিবর্তন এবং বিষণ্নতা
-
ঘুমের সমস্যা
-
ওজন বৃদ্ধি
-
শরীরের লোমের বৃদ্ধি কমে যাওয়া
এই লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্যায়াম কিভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে?
নিয়মিত ব্যায়াম, বিশেষ করে ওজন বহনকারী ব্যায়াম এবং উচ্চ-তীব্রতার ব্যায়াম (HIIT), প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ব্যায়ামের উপকারিতা:
-
ওজন কমায় → ওজন বেশি থাকলে টেস্টোস্টেরন কমে যায়। ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে।
-
পেশি বৃদ্ধি করে → টেস্টোস্টেরন পেশি তৈরিতে সহায়তা করে, আবার পেশি বাড়লে হরমোনের উৎপাদনও বাড়ে — এটি একটি ইতিবাচক চক্র।
-
মানসিক চাপ কমায় → ব্যায়াম কর্টিসল (চাপের হরমোন) কমিয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
-
রক্ত চলাচল বাড়ায় → এটি হরমোন পরিবহন ও কার্যকারিতা বাড়ায়।
সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম:
-
ওজন উত্তোলন (Weight Training) – স্কোয়াট, ডেডলিফট, বেঞ্চ প্রেস ইত্যাদি
-
HIIT (High Intensity Interval Training) – অল্প সময়ে বেশি ক্যালোরি খরচ ও হরমোন বৃদ্ধি করে এরকম ব্যায়াম
-
কম্পাউন্ড এক্সারসাইজ – যেসব ব্যায়ামে একাধিক পেশি কাজ করে (যেমন পুল-আপস, লাংস)
ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়েট কিভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে?
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস সরাসরি হরমোন উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। সঠিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার খেলে শরীর পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন তৈরি করতে পারে।
কোন খাবারগুলো টেস্টোস্টেরন বাড়ায়:
-
স্বাস্থ্যকর চর্বি (Good Fats):
-
অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো, ডিমের কুসুম, মাছের তেল
-
শরীরের হরমোন তৈরিতে চর্বি দরকার — একেবারে চর্বি বাদ দিলে হরমোন কমে যায়।
-
-
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার:
-
মুরগি, ডিম, মাছ, ডাল, দুধ ইত্যাদি
-
পেশি তৈরিতে সহায়তা করে, যা টেস্টোস্টেরন বাড়ায়।
-
-
জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়াম:
-
গলদা চিংড়ি, পালং শাক, কুমড়োর বীজ, দুধ, বাদাম
-
হরমোন তৈরির জন্য অপরিহার্য।
-
-
ভিটামিন ডি:
-
রোদ, ডিম, মাশরুম, স্যামন মাছ
-
ঘাটতি হলে টেস্টোস্টেরন কমে যেতে পারে।
-
-
ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
-
ফলমূল ও শাকসবজি → হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
-
যেসব খাবার এড়াতে হবে:
-
অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার
-
বেশি পরিমাণ প্রসেসড ফুড (প্যাকেটজাত খাবার)
-
সোডা ও সফট ড্রিংক
-
অতিরিক্ত অ্যালকোহল
-
ট্রান্স ফ্যাট (ফাস্ট ফুডে প্রচুর থাকে)
তবে পুরুষদের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় টেস্টোস্টেরন থাকলে তা হাইপারঅ্যান্ড্রোজেনিজম, হৃদ্যন্ত্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষদের মৃত্যুহার বৃদ্ধি, এবং টাক পড়ার প্রবণতা (মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস)-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।
সা/ই