
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনছে ভারত—এ অভিযোগ তুলে দেশটির পণ্যের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি, যা কার্যকর হতে যাচ্ছে ৭ আগস্ট থেকে। তবে ট্রাম্পের এমন হুমকির কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতীয় স্বার্থে জ্বালানি কেনা অব্যাহত থাকবে এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মস্কোর ওপর একযোগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষ করে রুশ তেল ও গ্যাস খাতে ব্যাপক বিধিনিষেধ জারি করা হয়, যার ফলে রাশিয়ার প্রচলিত রপ্তানি পথগুলো কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
বিকল্প বাজার খুঁজতে গিয়ে রাশিয়া বাধ্য হয় বড় ছাড়ে তেল বিক্রি করতে—পশ্চিমাদের নির্ধারিত প্রাইস ক্যাপের নিচে। ঠিক সেই সুযোগকেই কৌশলে কাজে লাগায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতি ভারত। যুদ্ধের আগে যেখানে রাশিয়া ভারতের তেল আমদানির মাত্র ১ শতাংশ যোগান দিত, ২০২৩ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে।
বর্তমানে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারত গড়ে দৈনিক ১.৭৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করছে রাশিয়া থেকে, যা দেশটির প্রধান তেল সরবরাহকারীর অবস্থানকে নিশ্চিত করেছে।
সস্তা তেল কিনে রপ্তানির পথে ভারত
ভারতের তেল আমদানির উদ্দেশ্য কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো নয়। দেশটি রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত তেল প্রক্রিয়াজাত করে তা আবার রপ্তানি করছে পশ্চিমা দেশগুলোতেও। এই অবস্থানকে ‘অনৈতিক’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘যেখানে ইউক্রেনে মানুষ মরছে, সেখানে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে লাভের সুযোগ নিচ্ছে। এটা বরদাস্ত করা যায় না।’
৪ আগস্ট রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতের এমন আচরণের জবাবে আরও শুল্ক আরোপ করা হবে।
দিল্লির জবাব: যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অযৌক্তিক
ট্রাম্পের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, ‘জ্বালানি তেল কেনা আমাদের জাতীয় স্বার্থ। এই স্বার্থ রক্ষায় আমরা যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’
ভারত জানায়, রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কেনার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইন ও বাজারনীতি অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র একদিকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, অন্যদিকে নিজেরাই রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু খাতে বাণিজ্যে জড়িত। এই দ্বিচারিতা গ্রহণযোগ্য নয়।’
সম্পর্কের নতুন উত্তেজনা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প যদি আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তবে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন করে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে জ্বালানি ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে ঘিরে উভয় দেশের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে।
বর্তমানে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতি এবং কৌশলগত মিত্র হিসেবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেকখানি ঘনিষ্ঠ হলেও, রাশিয়া সংক্রান্ত ইস্যুতে এই টানাপোড়েন ভবিষ্যতের সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=PWqlSpYzT04
রাকিব