ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

ফলন ভালো, তবু সোনালি আঁশের সোনালি স্বপ্নে ভাটা পড়ার শঙ্কা

পুলক সরকার, খোকসা, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ৬ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৬, ৬ আগস্ট ২০২৫

ফলন ভালো, তবু সোনালি আঁশের সোনালি স্বপ্নে ভাটা পড়ার শঙ্কা

ছবি: জনকণ্ঠ

কুষ্টিয়ার খোকসায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়িয়ে পাট ধোয়া এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষাণ-কিষাণীরা। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সময়মতো পাট কেটে বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিতে না পারলেও কয়েকদিন আগে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন জলাশয়ে পানি জমে। সেই পানিতেই এখন পাট জাগ ও ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর খোকসা উপজেলায় পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর। কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, মৌসুমের শুরুতে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের বৃদ্ধি ভালো হয়েছে। এতে কৃষকেরাও খুশি। তারা আশা করছেন, যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়, তাহলে পাটের গুণগত মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে। এদিকে, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করায় অনেক কৃষকই ভালো দামের আশায় পাট শুকানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে পানির অভাবে পাট পচন ভালো না হলে সোনালি আঁশের সেই সোনালি স্বপ্নে ভাটা পড়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে-মাঠে চলছে পাট কাটার কাজ। বর্ষা মৌসুমে উপযুক্ত পানি থাকার কারণে পাট জাগ দেওয়াতেও সুবিধা হচ্ছে কৃষকদের।

সরজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা স্থানভেদে পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, পাট ধোয়া এবং হাটে-বাজারে বিক্রিসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পাট ছাড়ানোর কাজ চলছে। তবে, শ্রমিক সংকট ও জাগ দেওয়ার উপযুক্ত খালবিলের অভাব কিছু এলাকায় সমস্যা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন কিছু কৃষক।

স্থানীয় কৃষক আবুল কাশেম বলেন, ‘এ বছর পাটের গাছ লম্বা ও মোটা হয়েছে। ভালো দাম পেলে আমাদের কষ্ট সার্থক হবে।’

উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের পাটচাষি মোকাররম হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমি চাষ, বীজের দাম, বীজ বপন, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার খরচ থাকে। আর পাট কাটা ও ধোয়ায় খরচ পড়ছে বিঘায় ৩-৪ হাজার টাকা। এ বছর পাটের দাম ভালো থাকায় আমরা লাভবান হয়েছি।’

আরেক কৃষক নাজমুল ইসলাম জানান, ‘পাট পচানোর জন্য যদি পর্যাপ্ত পানি না মেলে, তাহলে আঁশ ভালো হবে না। এতে করে বাজারে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।’

খালের পানিতে পাট ধোয়ার কাজ করেছেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানো ও ধোয়ার জন্য এক বেলা খাবারসহ দৈনিক ৫০০ টাকা পাই।’

প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশ এবং আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে পাটের ফলনও আশানুরূপ হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল নোমান। তিনি আরও জানান, কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাকিব

×