ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

এই ৫টি ক্যানসার আপনার বয়স ৩০ পেরোলেই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে! সতর্ক হন এখনই

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ৬ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৫:২৯, ৬ আগস্ট ২০২৫

এই ৫টি ক্যানসার আপনার বয়স ৩০ পেরোলেই হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে! সতর্ক হন এখনই

ছবি: সংগৃহীত

এক হৃদয়বিদারক খবরে জানা গেছে, “দ্য ওয়াকিং ডেড”, “শিকাগো মেডসহ একাধিক জনপ্রিয় টিভি সিরিজে অভিনয় করা অভিনেত্রী কেলি ম্যাক ৩৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা নামক বিরল ও আক্রমণাত্মক ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন এবং ২ আগস্ট তার মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবার ইনস্টাগ্রামে মৃত্যুর খবর জানিয়ে লিখেছে, “অপরিসীম বেদনার সঙ্গে আমরা আমাদের প্রিয় কেলির মৃত্যুসংবাদ জানাচ্ছি। এক উজ্জ্বল, দীপ্তিমান আত্মা আমাদের ছেড়ে সেই জায়গায় চলে গেছে, যেখানে একদিন আমাদের সকলকেই যেতে হবে। শনিবার সন্ধ্যায় কেলি শান্তভাবে মৃত্যুবরণ করেন, তার মায়ের (ক্রিস্টেন) স্নেহময় উপস্থিতি ও খালার (কারেন) পাশে থেকে। অনেকেই ইতোমধ্যে কেলির উপস্থিতি প্রজাপতির রূপে অনুভব করেছেন। তাঁকে প্রচণ্ডভাবে মিস করা হবে—যা ভাষায় প্রকাশের অতীত।”

কিন্তু গ্লিওমা আসলে কী? এটা কি সবসময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এবং ৩০ ও ৪০-এর দশকের মানুষদের মধ্যে সাধারণত যেসব ক্যানসার বেশি দেখা যায়, সেগুলো কী কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক…

ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা (DMG)

কেলি ম্যাক যে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তা হলো ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা (DMG), যা একটি বিরল এবং অত্যন্ত আক্রমণাত্মক মস্তিষ্কের টিউমার। এটি প্রধানত শিশু ও তরুণদের মধ্যে দেখা যায়। এই মারাত্মক টিউমারটি মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের কেন্দ্রীয় অংশে গড়ে ওঠে, বিশেষ করে পন্স, থ্যালামাস এবং কিছু ক্ষেত্রে সেরিবেলাম বা স্পাইনাল কর্ডেও দেখা যায়। আগে একে ডিফিউজ ইন্ট্রিনসিক পন্টাইন গ্লিওমা (DIPG) বলা হলেও, এখন চিকিৎসাবিদরা একে ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা (DMG) হিসেবেই চিহ্নিত করছেন, কারণ এর জিনগত বৈশিষ্ট্য ও আচরণ একই ধরনের।

"ডিফিউজ মিডলাইন গ্লিওমা" বলতে কী বোঝায়?

এই ক্যানসারে টিউমারের কোষগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ ব্রেন কোষের সঙ্গে মিশে গিয়ে কঠিন টিউমার গঠন রোধ করে। ফলে এটি অস্ত্রোপচার করে সরানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এই টিউমারটি এমন জায়গায় গড়ে ওঠে, যা দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন নিঃশ্বাস, গিলতে পারা, এবং চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

গ্লিওমাতে টিউমার তৈরি হয় গ্লিয়াল কোষ থেকে, যেগুলো স্নায়ু কোষকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজ করে।

উপসর্গসমূহ

টিউমারের অবস্থান ও বেড়ে ওঠার গতির ওপর ভিত্তি করে উপসর্গগুলো দেখা দেয়। DMG-এর লক্ষণগুলো হঠাৎ করে শুরু হয় এবং কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই মারাত্মক আকার ধারণ করে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—

  • এক বা উভয় পাশে হাত বা পায়ে দুর্বলতা বা অসাড়তা

  • চলাফেরায় ভারসাম্যহীনতা বা পড়ে যাওয়া

  • কথা বলায় অসুবিধা বা জড়তা

  • গিলতে অসুবিধা, খাবার খেতে গিয়ে হাঁপ ধরা বা কাশি

  • মুখের এক পাশে অবশভাব বা ঝুলে পড়া

  • ডাবল বা ঝাপসা দেখা, চোখ নাড়াতে সমস্যা

  • তীব্র মাথাব্যথা, যা সকালে বেশি হয়

  • বমি বা বমি বমি ভাব (মস্তিষ্কে চাপ বৃদ্ধির কারণে)

  • দুর্বলতা বা অতিরিক্ত ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা

  • প্রস্রাব বা মল নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা (স্পাইনাল ইনভলভমেন্টে)

এই রোগ প্রধানত শিশুদের মধ্যে দেখা গেলেও, তারা আচরণগত সমস্যা ও পড়ালেখায় সমস্যায় পড়তে পারে।

প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস

DMG-এর ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস অত্যন্ত হতাশাজনক। আক্রান্ত শিশুদের গড় আয়ু ৯-১২ মাস হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল তাদের আয়ু কিছুটা বাড়াতে পারে। এই রোগ এখনও নিরাময়যোগ্য নয়। তবে জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ও মানসিকভাবে সাপোর্ট দিতে নিউরোলজিস্ট, অনকোলজিস্ট, থেরাপিস্ট ও কাউন্সেলরের একটি দল এবং পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩০ ও ৪০-এর দশকের মানুষের মধ্যে যে শীর্ষ ৫টি ক্যানসার বেশি দেখা যায়:

১. স্তন ক্যানসার (Breast Cancer)

স্তনের কোষ থেকে উৎপত্তি হওয়া ক্যানসার। এটি নারীদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়, তবে পুরুষরাও আক্রান্ত হতে পারে (অবশ্যই বিরল)। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্তনে গাঁঠ বা আকারে পরিবর্তন, ত্বকের অস্বাভাবিকতা, নিপল থেকে তরল বের হওয়া ইত্যাদি। চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও টার্গেটেড ওষুধ। নিয়মিত স্ক্রিনিং-এর মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসায় সুফল পাওয়া সম্ভব।

২. থাইরয়েড ক্যানসার (Thyroid Cancer)

ঘাড়ে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থিতে উৎপত্তি হওয়া ক্যানসার। এর প্রধান চারটি ধরন হলো—প্যাপিলারি, ফলিকুলার, মেডুলারি ও অ্যানাপ্লাস্টিক। এটি ধীরে ধীরে বাড়ে এবং সাধারণত চিকিৎসাযোগ্য। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে থাইরয়েড সরানো হয়, প্রয়োজনে দেওয়া হয় রেডিও-অ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি। টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি মিলিয়ে চিকিৎসা হয়। আগেভাগে ধরা পড়লে নিরাময়ের সম্ভাবনা বেশি।

৩. মেলানোমা (Melanoma)

এটি ত্বকে অবস্থিত মেলানোসাইট কোষ থেকে শুরু হয়, যেগুলো রঙ বা পিগমেন্ট তৈরি করে। মেলানোমা সাধারণত আঁচিল বা নতুন গাঢ় দাগ দিয়ে শুরু হয়। সতর্কতামূলক লক্ষণ হলো আঁচিলের আকার, রং বা গঠনে পরিবর্তন। আগেভাগে শনাক্ত হলে অস্ত্রোপচারে সহজে ক্যানসার কোষ সরানো যায়। অগ্রসর ক্ষেত্রে ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি বা কেমোথেরাপি প্রয়োজন হয়।

৪. কোলোরেক্টাল ক্যানসার (Colorectal Cancer)

কোলন বা রেকটামে শুরু হয় এই ক্যানসার, যা সাধারণত পলিপ থেকে ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়। উপসর্গের মধ্যে রয়েছে—মলত্যাগের স্বভাব পরিবর্তন, রক্ত মেশানো মল, পেটব্যথা ও অযাচিত ওজন কমে যাওয়া। স্ক্রিনিংয়ের জন্য কলোনোস্কোপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন ও টার্গেটেড থেরাপি।

৫. লিম্ফোমা (Lymphoma)

লিম্ফাটিক সিস্টেমে উৎপত্তি হওয়া ক্যানসার। এটি দুই ধরনের হতে পারে—হজকিন ও নন-হজকিন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী কোষ লিম্ফোসাইটকে আক্রান্ত করে। উপসর্গগুলো হলো—গলা বা কুঁচকিতে গাঁঠ, জ্বর, রাতে ঘেমে যাওয়া ও ওজন কমে যাওয়া। চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যানসারের ধরন ও স্টেজের ওপর—ব্যবহৃত হয় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, টার্গেটেড থেরাপি ও স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট।

আবির

আরো পড়ুন  

×