ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রামক রোগ আবারও ছড়াচ্ছে, হুমকিতে লাখো শিশুর প্রাণ

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ৬ আগস্ট ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রামক রোগ আবারও ছড়াচ্ছে, হুমকিতে লাখো শিশুর প্রাণ

ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক বড় গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন শিশু নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। করোনার প্রভাবে ভেঙে পড়া টিকাদান কার্যক্রম এবং ভ্যাকসিনের ওপর জনসাধারণের আস্থার ঘাটতি এর জন্য দায়ী। এর ফলেই হামের মতো মারাত্মক সংক্রামক রোগ এবং হুপিং কাশি (পার্টুসিস)-এর মতো রোগ আবারও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা একে “গত তিন দশকে শিশুদের টিকাদানে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই ধসের ফলে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে হামের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো টিকাদান হার কমে যাওয়া, কোভিডজনিত স্বাস্থ্যসেবায় বিঘ্ন এবং জনগণের টিকাবিষয়ক আস্থার সংকট।

কেন হাম আবার বাড়ছে?

হামকে পৃথিবীর সবচেয়ে সংক্রামক রোগ হিসেবে ধরা হয়। এর R₀ মান ১২ থেকে ১৮—মানে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি অনায়াসে বহু লোককে সংক্রমিত করতে পারে। ২০২৩ সালে বিশ্বে হামের রোগীর সংখ্যা ১০.৩ মিলিয়নে পৌঁছায়, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০% বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল পাঁচ বছরের নিচে শিশু। কোভিড মহামারিকালে বহু শিশু টিকাই পায়নি। ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিশু হাম প্রতিরোধী টিকার একটিও গ্রহণ করেনি।

হুপিং কাশির ভয়াবহ উত্থান

হুপিং কাশি বা পার্টুসিসের প্রাদুর্ভাবও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০% বেড়েছে। ২০২৫ সালেই ইতিমধ্যে ৭,১০০-এর বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে, যা আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ। মূল কারণ—DTaP টিকার গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়া। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি এবং এই বয়সীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার বাড়ছে।

কেন এই সংক্রমণগুলো বাড়ছে?

BMJ ও একাধিক স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে অন্তত ৪০টি দেশে হাম, পার্টুসিস, যক্ষ্মা ও পোলিওর মতো রোগে সংক্রমণ বেড়েছে, কোথাও কোথাও ১০ গুণ পর্যন্ত। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে MMR (হাম, হামগুটি ও রুবেলা) টিকা গ্রহণের হার নেমে এসেছে ৯২.৫%-এ, যেখানে হার্ড ইমিউনিটির জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ৯৫%। টেক্সাসে ২০১৯ সালের ৯৬.৯% থেকে ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৩.২%-এ।

শিশুদের জন্য কেন এসব রোগ ভয়ংকর?

হাম শুধুই একটি জ্বর বা র‍্যাশ নয়—এটি নিউমোনিয়া, অন্ধত্ব, মস্তিষ্কের প্রদাহ এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগপ্রতিরোধ হ্রাসের কারণ হতে পারে। প্রতি পাঁচজন আক্রান্ত শিশুর একজনের মধ্যে গুরুতর জটিলতা দেখা দেয় এবং পাঁচ বছরের নিচের শিশু ও ৩০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার অনেক বেশি। অপরদিকে, পার্টুসিসের কারণে শিশুদের তীব্র কাশি হয়, যা বমি, ফুসফুসে ক্ষত এবং শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এক বছরের নিচে আক্রান্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় এবং মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে।

কেন এই রোগগুলি আবার ছড়িয়ে পড়ছে?

কারণ প্রভাব
কোভিডে নিয়মিত টিকাদান বন্ধ হয়ে যাওয়া শিশুরা সংবেদনশীল হয়ে পড়ছে
টিকার প্রতি জনআস্থার সংকট সামাজিক প্রতিরোধ দুর্বল হচ্ছে
টিকাদান হার ৯৫%-এর নিচে নেমে যাওয়া সংক্রমণ ছড়াতে সুবিধা হচ্ছে
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সঠিক নজরদারির অভাব সংক্রমণ ধরা পড়ছে দেরিতে

 

এখনই কী করতে হবে?

  • বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত এলাকায়

  • টিকার ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে হবে এবং গুজব মোকাবিলা করতে হবে

  • জরুরি প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা ও নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে

  • গর্ভবতী নারী ও অভিভাবকদের টিকার বুস্টার ডোজ নিশ্চিত করতে হবে

  • ভারতের ‘মিশন ইন্দ্রধানুষ’-এর মতো উদ্যোগ সম্প্রসারণ করতে হবে

সতর্কবার্তা স্পষ্ট: হাম বা পার্টুসিসের মতো রোগগুলো যদি একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা দ্রুত, নীরবে এবং ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের জীবন বাঁচাতে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চাপমুক্ত রাখতে জরুরি ভিত্তিতে টিকাদানের হার বাড়াতে হবে, তথ্যভিত্তিক সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং টিকাদানে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রতিরোধযোগ্য এই রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবহেলা চলবে না।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/vaccination-gaps-spark-resurgence-in-measles-and-whooping-cough-global-warning/articleshow/123119595.cms

ইমরান

আরো পড়ুন  

×