
ছবি: সংগৃহীত।
সম্পর্কে ভালোবাসা, হাসি-কান্না, ছুটির দিন আর খাবারের অর্ডার-সবই সহজভাবে চলে। কিন্তু টাকা-পয়সার প্রসঙ্গ উঠলেই যেন একটা অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে আসে। বহু সফল সম্পর্কও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। অথচ প্রেম যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সচ্ছল আর স্বচ্ছ আর্থিক বোঝাপড়াও দাম্পত্য জীবনের অপরিহার্য অংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেমিক বা দম্পতিরা যদি কিছু সহজ ও বুদ্ধিদীপ্ত পদ্ধতিতে আর্থিক দায়িত্ব ভাগাভাগি করেন, তাহলে সম্পর্ক যেমন মজবুত হয়, তেমনি অপ্রয়োজনীয় চাপ থেকেও মুক্ত থাকা যায়। নিচে তুলে ধরা হলো এমনই ৭টি কার্যকরী উপায়:
১. ৫০/৫০ ভাগাভাগি: একেবারে সোজাসাপ্টা হিসাব
এই পদ্ধতিতে দুইজনই সমানভাবে সমস্ত খরচ বহন করেন-বাসাভাড়া, খাবার, ইন্টারনেট, এমনকি পোষা প্রাণীর খাবারও। একই রকম আয় হলে এটি বেশ কার্যকর।
তবে যদি একজনের আয় অনেক কম হয়, তাহলে তার পক্ষে "সমান ভাগ"ও বেদনাদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
২. আয়ের অনুপাতে ভাগ: ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা
যদি এক জনের আয় ৬০ হাজার এবং অপরজনের ১ লাখ ২০ হাজার হয়, তাহলে দুইজনকেই ২০ হাজার করে ভাড়া দেওয়াটা একেবারেই অযৌক্তিক।
এই পদ্ধতিতে মোট আয়ের শতকরা হারে খরচ ভাগ হয়-যেমন একজন ৪০% আর অপরজন ৬০%। এতে ভারসাম্য বজায় থাকে, তবে খোলামেলা আয় নিয়ে আলোচনা জরুরি।
৩. সমস্ত আয় একত্রে রাখা: এক দল, এক মানিব্যাগ
যেসব দম্পতিরা একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জীবন যাপন করছেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ। উভয়ের আয় একটি যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা হয়, সেখান থেকে বিল, সঞ্চয় ও দৈনন্দিন খরচ চলে।
তবে এই পদ্ধতি স্বচ্ছতা, বিশ্বাস ও নিয়ন্ত্রিত ব্যয়ের অভ্যাস দাবি করে। নয়তো হঠাৎ ৫ হাজার টাকার জুতো কেনা নিয়ে সমস্যা বাধতে পারে।
৪. তুমি এটা দাও, আমি ওটা দিচ্ছি পদ্ধতি
গণনার ঝামেলা না করে কেউ বাসাভাড়া ও ইন্টারনেট দেন, আর অন্যজন দেন বাজার ও রেস্তোরাঁর বিল। পারস্পরিক বিশ্বাস থাকলে এটি সহজ।
তবে ভারসাম্য রাখতে মাঝে মাঝে খরচ পর্যালোচনা করা দরকার, নইলে একজন বেশি চাপ নিতে পারেন।
৫. শুধুমাত্র যৌথ খরচে ভাগ: স্বাধীনতাও বজায় থাকে
যারা এখনো সবকিছু একত্রিত করতে রাজি নন বা ব্যক্তিগত খরচ আলাদা রাখতে চান, তাদের জন্য উপযুক্ত। ব্যক্তিগত খরচ, সঞ্চয় ও আয় নিজের অ্যাকাউন্টেই থাকে। কেবল বাসাভাড়া, বিদ্যুৎ, বাজার ও ডেট নাইটের খরচ ভাগাভাগি হয়।
একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি-কোন খরচ 'যৌথ' আর কোনটা 'ব্যক্তিগত'।
৬. বিকল্পভাবে খরচ বহন: সহজভাবে চলার কৌশল
একদিন একজন ডিনার বিল দিলেন, আরেকদিন অন্যজন সিনেমার টিকিট কেটে দিলেন। এটি স্বাভাবিকভাবে চলে, বিশেষ করে নতুন দম্পতিদের মধ্যে।
তবে এ পদ্ধতি স্মৃতি ও ভালো বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। তাই মাঝেমধ্যে পর্যালোচনা জরুরি-কারণ একতরফা খরচ ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে।
৭. হাইব্রিড পদ্ধতি: নিজেদের নিয়মে, নিজেদের ছন্দে
বেশিরভাগ বাস্তব জীবনের যুগল কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আটকে থাকেন না। যেমন কেউ বাসাভাড়া অনুপাতে ভাগ করেন, আবার খাবারের খরচ পালা করে দেন। কেউ কেউ বিল ও ভ্রমণের জন্য যৌথ অ্যাকাউন্ট রাখেন, আবার ব্যক্তিগত সঞ্চয় আলাদা।
এখানে মূল কথা একটাই-যোগাযোগ। প্রতিমাসে একবার “মানি ডেট” রাখা ভালো। এতে বাজেট, লক্ষ্য ও পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা যায়।
প্রেম যেমন একে অপরের প্রতি যত্নের বহিঃপ্রকাশ, তেমনি অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও সমতা সম্পর্কের ভিত্তিকে দৃঢ় করে। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করুন না কেন, স্বচ্ছ আলোচনা, সম্মান ও বিশ্বাস-এই তিনটি উপাদান থাকলে অর্থ কোনো সমস্যা নয়, বরং সম্পর্কের শক্ত ভিত হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান