
ছবি: জনকণ্ঠ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবসের আয়োজনে আলোকসজ্জা, কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি আর শিক্ষার্থীদের জন্য নৈশভোজে অবস্থপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবন,শহিদ মিনার, মেইন গেইট, টিএসসি ও কৃষি অনুষদ ভবনে আলোকসজ্জা করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য একাডেমিক বিল্ডিং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভবন,ড. কুদরত-ই খুদা ভবন ও ডিভিএম বিল্ডিংসহ অন্যান্য বিল্ডিংকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কৃষি অনুষদ ভবনে আলোকসজ্জা করায় বৈষম্যের অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ, জুলাই-৩৬ সড়ক ও জুলাই চত্বর উদ্বোধন, উপাচার্যের নেতৃত্বে র্যালি, আলোচনা সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে নৈশভোজে চরম অব্যবস্থাপনা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। টোকেন দিতে দেরি, খাবার দিতে দেরি, নিয়ম না মানা,খাবারে খাসির রেজালা না থাকা সহ একাধিক অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা । এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা। আয়োজনের নাম হল ফিস্ট দিলেও হলগুলোতে ছিল না তেমন কোনো আলোকসজ্জা।
হল ফিস্টে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী বলেন, "খাবারের টোকেন থাকার পরও তাদের খাবার না দিয়ে দুব্যর্বহার করেছেন । অনেক শিক্ষার্থী টিউশনির কারণে তাদের টোকেন অন্য বন্ধুকে দিয়ে গিয়েছিল কিন্তু তাদের খাবার দেননি বরং খারাপ আচরণ করেছেন অনেকের সাথে । জিয়া হলের হল সুপার সব কিছুতে শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করেন।
ভেটেরিনারি অনুষদের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জুবাইয়র আল ফুয়াদ বলেন, "২০০ এর অধিক শিক্ষার্থীর খাসির রেজালা না পাওয়ার অপ্রত্যাশিত এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। বিশেষ করে যেসব জুনিয়র ছেলেরা এইবার প্রথম হল ফিস্ট খাচ্ছে তারা যে উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে হল ফিস্টের জন্য এসেছিলো তারা অনেকে বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রথম হল ফিস্টের অংশীদার হলো"।
তিনি আরো বলেন, "এর আগে ১৬ ডিসেম্বর হল ফিস্টের সময়ও জিয়া হলে খাবার সংকট ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল। বারবার এমন অব্যবস্থাপনার ঘটনা হল প্রশাসনের অদক্ষতারই প্রমাণ বহন করে । হল প্রশাসনের এমন অব্যবস্থাপনায় জিয়া হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি । পাশাপাশি হল প্রশাসনের এমন অব্যবস্থাপনার কারণ এবং এখনও তিনটি ছাগল কোন কারণে, কেনো জীবিত রাখা হলো এর ব্যাখ্যা হলের সকল শিক্ষার্থীদের কাছে দেয়ার আহবান রইলো"।
হল ফিস্টে অব্যবস্থাপনার বিষয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হলের হল সুপার অধ্যাপক ড. আবু খায়ের মো. মুক্তাদিরুল বারী চৌধুরী বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যেই আমি বঞ্চিতদের লিস্ট করেছি তাদের জন্য বাকি খাসি জবাইয়ের ব্যবস্থা করেছি। তাদের খাসির মাংস ডাল ভাত খাওয়াবো। আমাদের গণনা অনুযায়ী ৩টা খাসি ছাড়াই হয়ে যাওয়ার কথা। তাই খাসি তিনটা জবাই করি নাই, অপচয় হতে পারে ভেবে। এর জন্য আবারো দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি আয়োজন সফল করার।
হল সুপার কাউন্সিলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ মন্ডল বলেন, এখনো সঠিকভাবে জানিনা। দুই একটা বিচ্ছিন্ন অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটতে পারে সব হলে না। অল্প সময় সীমাবদ্ধতার মধ্যে আয়োজন করায় কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন জিয়া হল বড় ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় সেখানে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে শুনেছি।
আলোকসজ্জার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. এমদাদুল হাসান বলেন, "আলোকসজ্জাটি কৃষি অনুষদকে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি। এটি মূলত প্রধান ফটক, জুলাই ৩৬ সড়কসহ সম্মুখভাগে অবস্থান করার কারনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে । আমাদের বাজেট স্বল্পতা রয়েছে যেকারনে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সব ভবনে আলোকসজ্জা করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হলফেস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ একান্ত কাম্য।"
শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ অংশগ্রহণ না থাকার বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত আয়োজন করেছি এখন শিক্ষার্থীরা আগ্রহী না হলে আমরা কি করতে পারি। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি গুলোয় যোগদানের ব্যাপারে আশানুরূপ আগ্রহ দেখায় নি।
শিহাব