ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এমন ৪টি সাপ্লিমেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ৬ আগস্ট ২০২৫

উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এমন ৪টি সাপ্লিমেন্ট

ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি, হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এমন একটি বড় কারণ হলো উচ্চ কোলেস্টেরল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, বেশিরভাগ মানুষ জানেই না—তাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা আসলে কেমন! কারণ এটি এমন এক "নীরব শত্রু", যাকে বাইরে থেকে দেখে চেনার উপায় নেই। কেবল একটি রক্তপরীক্ষাই পারে বলে দিতে আপনার রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা বেশি কিনা।

যদিও বয়স বা জেনেটিক্সের মতো কিছু বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তবে আমাদের খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা ও জীবনযাপন কিন্তু একদমই আমাদের হাতে। আর তাই এসব বদল আনতে পারলেই অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব এই সমস্যা।

পুষ্টিবিদরা বলেন, প্রথমে নজর দিতে হবে পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে। এরপর প্রয়োজন হলে কিছু বিশেষ সাপ্লিমেন্ট (খাদ্য-পরিপূরক) থেকেও পাওয়া যেতে পারে বাড়তি সাহায্য। নিচে এমনই চারটি সাপ্লিমেন্টের কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলোর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং পুষ্টিবিদদের সম্মতি।

১. ওমেগা-৩ (DHA ও EPA)
এই দুটো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মূলত মাছের তেল থেকে পাওয়া যায়, যেমন—স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে অন্তত ২ গ্রাম DHA ও EPA একসঙ্গে নিলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও নন-HDL কোলেস্টেরল কমে যায়। যদিও এদের সরাসরি "কোলেস্টেরল" বলা হয় না, তবে এই ফ্যাটগুলো বেশি থাকলে কোলেস্টেরলও সাধারণত বেশি থাকে।

সমস্যা হলো, আমাদের বেশিরভাগেরই প্রতিদিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস নেই। তাই সাপ্লিমেন্ট আকারে ওমেগা-৩ গ্রহণ করলে হৃদযন্ত্রের জন্য তা উপকারী হতে পারে।

২. প্লান্ট স্টেরল (Plant Sterols)
এই উপাদানটি অনেকটা কোলেস্টেরলের মতো দেখতে। তবে শরীরে ঢুকে সে কোলেস্টেরলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং অন্ত্র থেকে কোলেস্টেরলের শোষণ কমিয়ে দেয়। ফলে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে যায়।

এটি অনেকটা “ভালো চুরি”—যা শরীরের জন্য উপকারী! বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি স্যুপ, দুধ বা চিজজাতীয় খাবারের সঙ্গে খেলেই বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে কারও যদি বিশেষ জেনেটিক রোগ থাকে, তাহলে এটি অতিরিক্ত খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।

৩. সাইলিয়াম হাক (Psyllium Husk)
এই আঁশজাতীয় উপাদানটি অনেকের কাছেই পরিচিত ওজন কমানো বা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য। কিন্তু এটি যে কোলেস্টেরল কমাতেও কার্যকর, তা অনেকেই জানেন না।

সাইলিয়াম হাক শরীরের ভেতরে পিত্তরসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোলেস্টেরলকে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। তবে এটা নিয়ম মেনে খেতে হবে, কারণ এটি অন্য ওষুধ বা পুষ্টির শোষণ ব্যাহত করতে পারে।

৪. সয়া প্রোটিন (Soy Protein)
টফু, সয়ামিল্ক বা এডামামের মতো খাবারে পাওয়া যায় এই প্রোটিন। এটি লিভারে কোলেস্টেরলের উৎপাদন কমায় এবং রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল সরিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার থেকেই সয়া প্রোটিন খাওয়া সাপ্লিমেন্টের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।

আর ভাল খবর হলো—যদি আপনার সয়াতে অ্যালার্জি না থাকে, তবে আপনি একে নিশ্চিন্তে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন।

আরও কিছু উপকারী অভ্যাস যা উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে:
চর্বিযুক্ত খাবার কম খান: লাল মাংস, প্রসেসড মিট বা ফুল-ক্রিম দুধ কমিয়ে দিন।

ফল ও সবজি বেশি খান: প্রতিদিন অন্তত ৫ বার ফল বা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

সপ্তাহে অন্তত ২ দিন মাছ খান: বিশেষত তেলযুক্ত মাছ, যেমন স্যামন বা সার্ডিন।

ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দিন: এরা শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের পথে বড় বাধা।

“Heart Check” চিহ্নযুক্ত খাবার কিনুন: মার্কেটে হৃদযন্ত্র-বান্ধব খাবার খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।


উচ্চ কোলেস্টেরল কমানো মানেই শুধু ওষুধ নয়—এটা একটা জীবনযাত্রার পরিবর্তন।

খাবার, ব্যায়াম, অভ্যাস এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট—সব মিলিয়েই তৈরি হতে পারে আপনার নিজের জন্য একদম পারসোনাল স্বাস্থ্য পরিকল্পনা।

তবে যেকোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ শরীরের প্রয়োজন ও প্রতিক্রিয়া সবার একরকম হয় না।

সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন – নিজের হৃদয়ের খেয়াল নিজেই রাখুন।
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

মারিয়া

×