
পাকিস্তানে ফের উত্তেজনা চরমে। জেলবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদ। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিলে বিভিন্ন প্রান্তে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুধু লাহোর থেকেই আটক করা হয়েছে দেড় শতাধিক নেতাকর্মী। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে দেশের একাধিক স্থানে জারি করা হয়েছে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা।
ইমরান খানের কারাবন্দির দুই বছর পূর্তিতে ঘোষিত পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নামে পিটিআই। ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয় দলটির পক্ষ থেকে। তবে কোথাও সমবেত হওয়ার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের একের পর এক অভিযানে বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লাহোর পুলিশ জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করায় ৩০ জনের বেশি পিটিআই কর্মীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরজুড়ে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়।
সরকারি নির্দেশনায় ১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি জেলার ভেতরে সব ধরনের বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশ এবং চারজনের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে রাজপথে উত্তাপ ছড়ালেও এবার পিটিআই আগের মতো ইসলামাবাদে সরাসরি জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। জিও নিউজের এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরের সহিংসতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার দলটি কৌশল পরিবর্তন করেছে। ইসলামাবাদ এড়িয়ে দলটি মূলত পাঞ্জাবে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে। তবে ইসলামাবাদের মতোই পাঞ্জাবেও বলপ্রয়োগের কৌশল অনুসরণ করছে শাহবাজ শরিফের প্রশাসন।
বিক্ষোভ ঘিরে লাহোর থেকে অন্তত ছয়জন এমপিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন পিটিআইয়ের উপনেতা মঈন কুরেশি, এমপিএ ফারুক জাভেদ মুন, কর্নেল শোয়েব, নাদিম সাদিক ডোকার, খাজা সালাউদ্দিন, আমিনুল্লাহ খান এবং ইকবাল খট্টক। শুধু তাই নয়, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতেও চলছে নিয়মিত অভিযান ও তল্লাশি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভ ঘিরে অন্তত ২০০টি অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও অনেক নেতাকর্মীকে পরবর্তীতে মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় উপহারের মামলায় ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট থেকে কারাবন্দি রয়েছেন ইমরান খান। বর্তমানে তিনি আদিয়ালা কারাগারে দুর্নীতির মামলায় সাজা ভোগ করছেন। পাশাপাশি ৯ মে’র সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
দেশজুড়ে এমন অস্থির পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইমরান খানের মুক্তি ঘিরে পিটিআই যে পথে নামছে, তা সামনে আরও বড় ধরনের সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইমরান খানের মুক্তি এবং রাজনৈতিক পুনর্বাসনের প্রশ্নে পাকিস্তানের রাজনীতি ফের এক অনিশ্চয়তার মুখে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে আন্দোলনের তীব্রতা ও প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর। তবে এখনই একথা স্পষ্ট, পাকিস্তান আবারো এক উত্তাল সময়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আফরোজা