ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে: কাদের গনি চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:২২, ৬ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২০:২২, ৬ আগস্ট ২০২৫

রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে: কাদের গনি চৌধুরী

ছবি: জনকণ্ঠ

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, রমজানের আগে নির্বাচনের ঘোষণা হতাশ জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, আবার গণতন্ত্র ছাড়া নির্বাচন প্রায় অর্থহীন বা আত্মাহীন দেহের মতো। তাই আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রী হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই। যারা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেবে, জাতির কাছে তারা গণতন্ত্রের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

আজ বুধবার বিকেলে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের বছরপূর্তি উপলক্ষে পেশাজীবীদের র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব বলেন। পেশাজীবীরা পরে মিছিল নিয়ে বিএনপি আয়োজিত বিজয় র‌্যালিতে যোগ দেন।

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে র‌্যালিতে প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেন সবুজ, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল হালিম, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার উমাইশা উমায়ন মনি, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, জাহানারা সিদ্দিকী, ডা. রাকিব, ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, কৃষিবিদ সানোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এরফানুল হক নাহিদ, অপর্ণা রায়, কৃষিবিদ ড. শফিক, সাংবাদিক রাশিদুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মুসলিম উদ্দিন, সাংবাদিক আল-আমিন, রিয়েল রোমান, ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী থাকে। গত ১৭টি বছর এ দেশের মানুষ ছিল ভোটাধিকারহীন। মানুষ এখন ভোট দিতে চায়, তাদের অধিকার ফিরিয়ে পেতে চায়।

তিনি বলেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিগত ১৬ বছর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনে সোনার বাংলাকে পরিণত করা হয়েছিল মৃত্যু উপত্যকায়। ফ্যাসিস্ট শাসনের ভয়ঙ্কর সময়ে দেশের মানুষ ছিল অধিকারহারা। দেশে গণতন্ত্র ছিল না, মানবাধিকার ছিল না, আইনের শাসন ছিল না, ভোটাধিকার ছিল না, বাকস্বাধীনতা ছিল না, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। ‘ন্যায় বিচারের ব্যাংক’ হয়ে পড়েছিল দেউলিয়া। মানবতার কোষাগার শূন্য হয়ে পড়েছিল। ছিল না স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি।

পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরাও রেহাই পাননি শেখ হাসিনার নিষ্ঠুর শাসন থেকে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক আফতা আহমদ, সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি, এডভোকেট এইউ আহমদ, ব্যাংকার বিএম সাকের হোসাইনসহ অসংখ্য পেশাজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার ১৬ বছরে জীবন দিতে হয়েছিল ৬৭ জন সাংবাদিককে। পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা হত্যা করা হয়। শাপলা চত্বরে ব্রাশফায়ারে অনেক আলেমকে হত্যা করা হয়। গুম-খুন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, শিক্ষক, ব্যাংকার থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক কর্মী—কেউ রেহাই পায়নি নিষ্ঠুরতা থেকে।

পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, চাকরি, পদোন্নতি হতো দলীয় বিবেচনায়। ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তিমূলক বদলি, পদোন্নতি বঞ্চিত ও চাকরিচ্যুতি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং র‌্যাব গোপন টর্চার সেল ‘আয়না ঘর’ তৈরি করে সেখানে ভিন্নমতাবলম্বীদের উপর চালানো হতো বর্বর নির্যাতন।

আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় শুধু জেলেই নেওয়া হয়নি, আদালত চত্বরে রক্তাক্ত করা হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ‘আমার দেশ’ পত্রিকা অফিস। ‘দৈনিক সংগ্রাম’-এর বর্ষীয়ান সম্পাদক আবুল আসাদকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা নিজ অফিস থেকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ‘যায়যায়দিন’ সম্পাদক শফিক রেহমান, ‘দ্য নিউ নেশন’ সম্পাদক ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, বিএফইউজে সভাপতি ও আমাদের পেশাজীবী নেতা রুহুল আমিন গাজী, ডা. এজেএম জাহিদ হোসেন, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ড. শহিদুল আলম, ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, কনক সারোয়ার, অলিউল্লাহ নোমানসহ বহু সাংবাদিককে গ্রেফতার করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়।

আবির

×