ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে যে ‘তিনটি জিনিস’ চায় এনসিপি

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ৬ আগস্ট ২০২৫

নির্বাচনের আগে সরকারের কাছে যে ‘তিনটি জিনিস’ চায় এনসিপি

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘অসম্পূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সরকার এখনো জুলাই শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলা মোটরের রূপায়ন টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

আখতার হোসেন বলেন, “ঘোষণাপত্রে শহীদদের জাতীয় বীরের মর্যাদা ও শহীদ পরিবার, আহত এবং আন্দোলনকারীদের আইনি সুরক্ষা প্রদানের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এটি একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতিও বহন করে।”

তবে তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে এনসিপি যে দাবিগুলো জানিয়ে আসছিল, তার বেশ কিছুই এই ঘোষণাপত্রে অনুপস্থিত। বিশেষ করে, ১৯৪৭ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গ এবং জুলাইয়ের শহীদদের সঠিক সংখ্যা উল্লেখ না থাকাকে তিনি বড় ঘাটতি বলে উল্লেখ করেন।

“ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে ‘প্রায় এক হাজার’ শহীদ। অথচ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ১,৪০০ উল্লেখ আছে। সরকার এখনো প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে ব্যর্থ,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বর, কোটা সংস্কার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার হত্যাকাণ্ড ও মোদিবিরোধী আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর উল্লেখ না থাকায় ঘোষণাপত্রটি পূর্ণতা পায়নি।

আখতার হোসেন দাবি করেন, ঘোষণাপত্রের ২৫ ও ২৭ নম্বর ধারায় নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে এ ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্তির কথা থাকলেও, এনসিপি দীর্ঘদিন ধরেই সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছে। তার মতে, এভাবে বর্তমান সংবিধানেই বিষয়টি রেখে নতুন সংবিধানের দাবিকে পাশ কাটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো রূপরেখা নেই। এটা উদ্বেগজনক।”

আখতার আরও বলেন, “বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর যে উত্থান ঘটেছে, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে এবং সেখানে জুলাই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুলাই সনদের যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, সেগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় থেকেই বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। আর সেই সংস্কারকে ভিত্তি করেই পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ঘোষিত নির্বাচনের সময় (ফেব্রুয়ারি) নিয়ে এনসিপির আপত্তি নেই জানিয়ে আখতার বলেন, “তবে নির্বাচন আয়োজনের আগে সরকারের কিছু আবশ্যিক দায়িত্ব রয়েছে—যেমন, গণহত্যাকারীদের বিচার, কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।”

সবশেষে তিনি সরকারের কাছে প্রতিশ্রুতি চান, নির্বাচনের পূর্বেই সংস্কার কার্যকর, বিচার নিশ্চিত, মাঠ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হবে।

শিহাব

×