ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান

এমন সরকার দেশ পরিচালনা করুক, যাদের জনগণ নির্বাচন করবে

শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৬ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩২, ৬ আগস্ট ২০২৫

এমন সরকার দেশ পরিচালনা করুক, যাদের জনগণ নির্বাচন করবে

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, লড়াই এখনো শেষ হয় নাই। আমাদের লড়াই শুধু ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য ছিল না, গণতন্ত্র পুর্নপ্রতিষ্ঠার জন্য ছিল। এজন্য আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাাচনের কথা বলেছি। অনেকেই নানাভাবে বাঁধা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা ক্রমাগত বলেছি- আমরা জনগনের শাসন চাই। আমরা এমন সরকার চাই- এমন সরকার দেশ পরিচালনা করুক, যাদেরকে জনগন নির্বাচিত করবে। তারা জনগনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জনগণকে জবাবদিহিতা করবে। এমন একটা গণতন্ত্রের সরকার আমরা চাই।

বুধবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল চত্বরে ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির যৌথ বিজয় মিছিল পূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, গতকাল (৫ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময় ঘোষনা করেছে। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি লন্ডনের মিটিংয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যে কথা দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করেছেন। উনি তিনি তারিখ ঘোষনরা করতে পারেন না। আইনে এটা ঘোষনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তিনি নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিবেন। আমরা আশা করব- নির্বাচন কমিশন যত সম্ভব শিগগিরই নির্বাচিনের তারিখ ঘোষনা করবেন।

তিনি আরও বলেন, যে বিজয়ের বর্ষপূর্তি আমরা উদযাপন করছি, তা এমনিতেই আসে নাই। এই বিজয় সকলের সমাবেত চেষ্টায় এনেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর আপনারা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে অবিরাম লড়াই করেছেন। লড়াই আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম হয়েছে, শত শত নেতাকর্মী খুন হয়েছে। অনেকেই পরিকল্পিত হত্যার শিকার হয়েছে। লাখো নেতাকর্মী আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছে। সবাই কোন না কোনভাবে বিগত সরকারের সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারপরও কেউ লড়ায়ের ময়দান পরিত্যাগ করেন নাই। আপনারা ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন,আর সে কারণেই ২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। যারা শহীদ হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাগফেরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা। একই সঙ্গে বিগত ১৬ বছরের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে যারা আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে, কারাবন্দি হয়েছে তাদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা। এই লড়াইয়ে অনেক মা সন্তান হারিয়েছেন। তাদের একজন আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এই লড়াইয়ের সময়ে তার এক পুত্রকে হারিয়েছেন। তিনি বিদেশ গিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেক ভাই তার তার ভাইকে হারিয়েছে। সে রকম আরেকজন ভাই আমাদেও নেতা তারেক রহমান। তিনি তার ভাইকে হারিয়েছেন। অনেকেই কারাবন্দি হয়েছেন। তাদের মধ্য অন্যতম হলেন আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যাকে মিথ্যা অভিযোগে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। সেখানে ভুল চিকিৎসা করে তাকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

প্রবীণ এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, আমাদের লড়াইয়ের ফসলের পূর্ণতা পাওয়ার সময় এসেছে। আমরা লড়াই করেছিলাম ফ্যসিবাদের পতনের জন্য। আমরা আন্দোলন করেছিলাম, তাদের পতনের পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুর্নপ্রতিষ্ঠিত হবে। নানাভাবে এই প্রয়াসকে বাঁধাগ্রস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারপরও দেশের সকল শ্রেণিপেশাপর মানুষের লড়াইয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মত শেখ হাসিনা কাপুরুষের মত ভীরু নারী দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এর আগেও আরও অনেক সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু কেউ পালিয়ে যায় নাই।

এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বিগত ১৬ বছরে যারা জীবন দিয়েছে, তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে, তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তায়বন করতে হলে বিএনপিকে নির্বাচিত করতে হবে। আর এই নির্বাচনে বিজয়য়ের একমাত্র মূল অস্ত্র হচ্ছে জনগণের হৃদয় জয় করা, জনগণের ভালোবাসা এবং তাদের সমর্থন অর্জন করা। তাই আজকের এইদিনে শপথ নিন, আমরা কেউ এমন কাজ করবো না, এমন কথা বলবো না। যাতে জনগণ কষ্ট পায়।

সমাবেশে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠ^নিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন।

সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিজয় মিছিল নগরীর টাউন হল থেকে শুরু হয়েছে স্টেশন রোড চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এতে ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করেন।

আলীম

×