ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজা দখলে নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের ভয়ংকর পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ৬ আগস্ট ২০২৫

গাজা দখলে নেতানিয়াহু-ট্রাম্পের ভয়ংকর পরিকল্পনা

ছবি: সংগৃহীত

 

গাজা উপত্যকা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে একদিন আগেই নতুন করে উত্তেজনার স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়েছেন দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আর তার সেই ঘোষণায় একরকম সিলমোহর দিয়ে দিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, গাজা কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নির্ধারণ করবে ইসরাইল সরকার—ওই বিষয়ে হোয়াইট হাউস হস্তক্ষেপ করবে না। ট্রাম্পের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে, গাজা দখল করলেও নেতানিয়াহুকে ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ আসবে না যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

ইসরাইলের হিব্রু গণমাধ্যম এবং টাইমস অফ ইসরাইল জানায়, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, গাজা দখলের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে চূড়ান্ত। তেলআবিব এখন পুরো উপত্যকার নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে যাবে এবং এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের আনুষ্ঠানিক সমর্থন চাওয়া হবে। এমন সিদ্ধান্তে সেনাবাহিনী প্রধান একমত না হলে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হবে—এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

এরপরেই ট্রাম্পের মন্তব্য আসে—যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু গাজার মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতেই আগ্রহী। গাজার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নেতানিয়াহুর সরকারের এখতিয়ার। এর মানে দাঁড়ায়, গাজা সম্পূর্ণভাবে দখলে নিলে হোয়াইট হাউস কোনো বাধা দেবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে গাজার ৮৬ শতাংশ এরই মধ্যে দখলে নিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ট্রাম্পের মৌন সমর্থনে ও মার্কিন সহায়তায় সেই দখলদারিত্ব চূড়ান্ত রূপ নিতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরাইলকে কোটি কোটি ডলার সমমূল্যের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এই সহায়তা আরও বাড়ানো হয়েছে। অথচ গোটা বিশ্ব যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন একমাত্র আমেরিকা তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অব্যাহত সমর্থনেই গাজায় নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।

গাজা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা সামনে আসতেই এবার সরব হয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সংস্থাটির সহকারী মহাসচিব মেরোসলাভ জেনুকা বলেন, “গাজা উপত্যকা জুড়ে ইসরাইলি অভিযানের সম্প্রসারণ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই পরিকল্পনা বাস্তব হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজায় এখনও যেসব জিম্মি আটকে আছেন, তাদের জীবন আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে। জেনুকা সাফ জানিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক আইনে গাজার ভবিষ্যৎ স্পষ্টভাবে নির্ধারিত—এই অঞ্চলকে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবেই রাখতে হবে। কিন্তু ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান সেই আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি বিরোধী।

বিশ্লেষকদের মতে, গাজা পুরোপুরি দখলে চলে গেলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর তাই এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অঞ্চলকে ধ্বংসের পথ থেকে ফেরানো কঠিন হবে।

শেখ ফরিদ

×