
ছবি: সংগৃহীত
চীনের অন্তত ১৩টি শহরে ছড়িয়ে পড়া মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। যদিও এই ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না, তারপরও এর দ্রুত বিস্তার রোধে কোভিড মহামারীর মতো সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ চীনের গুয়াংডং প্রদেশে, হংকংয়ের ঠিক উত্তরে, গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩,০০০ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছেন। চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সাধারণত চীনে বিরল, তবে জুলাইয়ের ৮ তারিখে ফোশান শহরে একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
গুয়াংডংয়ে কোভিডের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত সবাইকে মশারি দিয়ে বেষ্টিত হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে যতক্ষণ না পরীক্ষায় ভাইরাস নেগেটিভ আসে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের ঘরের আশেপাশের জমে থাকা পানির উৎস চিহ্নিত করে নির্মূল করা হচ্ছে, যেখানে মশা জন্মায়। যারা সহযোগিতা করেন না, তাদের জরিমানা বা শাস্তি হতে পারে।
এছাড়া, কিছু এলাকায় বিশালাকৃতির এক প্রজাতির মশা ছাড়া হচ্ছে, যাদের লার্ভা ক্ষতিকারক মশাদের ডিম খেয়ে মেরে ফেলে। পুকুরে মশাভক্ষণকারী মাছ ছাড়া, কীটনাশক ছিটানো এবং ড্রোন দিয়ে মশার বংশ বিস্তার নিরীক্ষণ করা হচ্ছে।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস কি?
চিকুনগুনিয়া হলো একটি মশাবাহিত ভাইরাস। এটি দ্বারা আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি, ক্লান্তি, চামড়ায় র্যাশ এবং ফুলে যাওয়া জয়েন্টসহ উপসর্গ দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ দুই সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়, তবে জয়েন্টের ব্যথা মাস বা বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। চিকুনগুনিয়া অনেক সময় ডেঙ্গু বা জিকা ভাইরাসের সঙ্গে গুলিয়ে যায়।
চিকুনগুনিয়ার নাম এসেছে তানজানিয়ার কিমাকন্ডে ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘যে কারণে মানুষ বাঁকানো অবস্থায় হাঁটে’, জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথার কারণে।
ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়?
এই ভাইরাস সংক্রমিত মশার কামড়ে মানুষ আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মানুষ আবার মশার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি সরাসরি সংক্রমণ হয় না।
চিকুনগুনিয়ার টিকা আছে কিনা?
হ্যাঁ। যুক্তরাষ্ট্রে দুইটি অনুমোদিত টিকা আছে— IXCHIQ (১৮ বছর ও তার উপরের জন্য) এবং VIMKUNYA (১২ বছর ও তার উপরের জন্য)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) শুধুমাত্র রোগপ্রবণ এলাকায় যাওয়ার জন্য টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রে কি চিকুনগুনিয়া আছে?
হ্যাঁ, তবে খুব কম। মূলত বিদেশ ভ্রমণের সময় সংক্রমণ হয়। ২০১৯ সালের পর স্থানীয় সংক্রমণ রিপোর্ট হয়নি। তবে ভ্রমণজনিত সংক্রমণ বেড়ে চলেছে।
কোথায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?
সিডিসি ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভারত, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপিন্সের ভ্রমণকারীদের সচেতন থাকার জন্য সতর্ক করেছে। চীনের ফোশান শহরের জন্যও লেভেল ২ সতর্কতা জারি করেছে।
কী লক্ষণ দেখবেন?
মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, বমি ভাব, ক্লান্তি, চামড়ায় র্যাশ, এবং ফুলে যাওয়া জয়েন্ট। সম্প্রতি হংকংয়ে ১২ বছর বয়সী এক ছেলেকে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
সূত্র: ফোর্বস।
রাকিব