
ছবি: সংগৃহীত
উত্তর আমেরিকার উপকূলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা রহস্যময় এক মহামারিতে মারা গেছে প্রায় ৫০০ কোটির বেশি স্টারফিশ। মেক্সিকো উপসাগর থেকে আলাস্কা পর্যন্ত বিস্তৃত এই মৃত্যু-যজ্ঞের প্রকৃত কারণ এতদিন অজানা থাকলেও এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন, অবশেষে তারা এই প্রাণঘাতী রোগের উৎস চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হাকাই ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যালিসা গেহম্যান জানান, স্টারফিশের বাহুতে ক্ষত তৈরি করে তা খসে পড়ার ঘটনা সত্যিই ভয়াবহ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষয়প্রক্রিয়ার পেছনে দায়ী একটি ব্যাকটেরিয়া—‘ভিব্রিও পেকটেনিসিডা’।
স্টারফিশ সাধারণত পাঁচটি বাহু নিয়ে জন্মালেও কিছু প্রজাতির ২৪টি পর্যন্ত বাহু থাকে। এই প্রাণীগুলোর রঙও হয় কমলা, বেগুনি, বাদামি বা সবুজ। ২০১৩ সাল থেকে উত্তর আমেরিকার উপকূলীয় এলাকায় স্টারফিশের গণমৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২০টিরও বেশি প্রজাতি এই মহামারির কারণে বিপর্যস্ত হয়েছে।
বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ‘সানফ্লাওয়ার স্টার’ নামের এক প্রজাতি। বিজ্ঞানীদের মতে, মহামারি শুরুর প্রথম পাঁচ বছরেই এই প্রজাতির প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
গবেষণায় যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক জীবাণুবিদ ড. রেবেকা ভেগা থারবার। তিনি বলেন, “আমরা অবশেষে সমুদ্রের এক গুরুতর রোগের প্রকৃত উৎস জানার পথে এগোতে পেরেছি। এটি একটি বড় সাফল্য।”
তবে এই রহস্য উন্মোচন সহজ ছিল না। শুরুতে বিজ্ঞানীরা ‘ডেনসোভাইরাস’কে সন্দেহ করলেও পরে দেখা যায়, তা সুস্থ স্টারফিশের দেহেও স্বাভাবিকভাবে থাকে। এরপর ‘কোয়েলোমিক ফ্লুইড’ নামে একটি অভ্যন্তরীণ তরল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা সেখানে ‘ভিব্রিও পেকটেনিসিডা’ নামের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করেন।
এই ব্যাকটেরিয়া শুধু স্টারফিশ নয়, শেলফিশের মতো অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীতেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এখন প্রশ্ন উঠছে—সমুদ্রের তাপমাত্রা ও পরিবেশ পরিবর্তন কি এই মহামারির পেছনে ভূমিকা রেখেছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের রোগ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব