ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক ॥ সচিব পর্যায়ে শীঘ্রই বৈঠক

আলোচনায় সমাধান চায় বাংলাদেশ

এম শাজাহান

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২০ মে ২০২৫

আলোচনায় সমাধান চায় বাংলাদেশ

আলোচনায় সমাধান চায় বাংলাদেশ

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের স্বার্থে ভারতের মতো ‘প্রতিশোধমূলক’ পাল্টা পদক্ষেপ নিতে চায় না বাংলাদেশ। বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান বাণিজ্য সংকটের সমাধানে আগ্রহী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে ভারতে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে স্থলবন্দরে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেই সমস্যার সমাধানে আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হবে। শীঘ্রই বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। 
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অফিসিয়ালি দ্বিপক্ষীয় আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বেশি। বাণিজ্য ঘাটতি বরাবরই ভারতের অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থায় চলমান সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতও অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘ভারতে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে এর বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সংকট উত্তরণে আশাবাদী’। 
বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশে স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় পর থেকে দুদেশের ব্যবসায়ীরা অস্থিরতায় ভুগছেন। বাংলাদেশি যেসব পণ্য ভারতে রপ্তানি হয় সেগুলো স্থলবন্দর দিয়ে যেতে পারছে না। সমুদ্র পথে এসব পণ্য রপ্তানি করা হলে খরচ ও সময় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সেখানে কয়েকজন আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীও অংশগ্রহণ করেন। 
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব জানান, স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায়  শুধু আমাদের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কাজেই আসুন আমরা বসি, একটা সুরাহার পথ বের করি। স্থলবন্দর নিয়ে ‘প্রতিশোধমূলক’ পাল্টা পদক্ষেপ নয়, ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে বাংলাদেশের একটি ফোরাম রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই ফোরামে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে গত সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সেই চিঠির জবাব এলে আমরা জানতে পারব, কবে বসা যায়। তিনি জানান, সমস্যার সমাধানে আলোচনা এবং সচিব পর্যায়ে বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্থলবন্দর হয়ে পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় নির্ধারণে অংশীজনদের নিয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের মতামত নিয়েছি। পরিস্থিতির যাতে আর অবনতি না ঘটে, সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। 
বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের তৈরি পোশাক কোনো স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। এগুলো কেবল মুম্বাইয়ের নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে। ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ সুতা আমদানি বন্ধ করার এক মাসের মাথায় বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক পণ্য, ফলমূলসহ অন্তত সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

এসব পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, কোমল পানীয়, সুতা, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, কাঠের  তৈরি ফার্নিচার ইত্যাদি। ভারত এখন কেবল কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি করার সুযোগ দিচ্ছে। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে একই পণ্য পাঠাতে চার থেকে ১৫ গুণের বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে। খরচও বাড়বে চার-পাঁচগুণ। কত কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত পাড়ি দিতে হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আর বাড়তি পথ পাড়ি দিলে যে সময়-ব্যয় বাড়বে সেটা রপ্তানিকারকদের জন্য কতটা চাপের কিংবা আদৌ এভাবে পণ্য পাঠানো সম্ভব কি না সেটা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 
নিষেধাজ্ঞার আগে দেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাক ভারতে যেত মূলত ঢাকা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে কলকাতায়। এই স্থলপথের দূরত্ব প্রায় ৩৩৩ কিলোমিটার। এখন যেতে হবে সমুদ্রপথে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠালে ভারতের মুম্বাইয়ের নভো সেবা বন্দর অথবা ঢাকার পানগাঁও কিংবা মংলা বন্দর হয়ে কলকাতার হলদিয়া বন্দর পৌঁছতে হবে। 
রপ্তানিকারকরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে মুম্বাইয়ের নভো সেবা বন্দরের দূরত্ব প্রায় দুই হাজার ৬৫০ নটিক্যাল মাইল। পানগাঁও কিংবা মংলা থেকে কলকাতার হলদিয়ার দূরত্ব প্রায় ৭০  থেকে একশ নটিক্যাল মাইল। পণ্য বন্দরে পৌঁছালে তারপর সেখান থেকে সেভেন সিস্টার্স কিংবা অন্য গন্তব্যে যেতে হবে আলাদা পরিবহনের মাধ্যমে। এতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগবে, যা এতদিন করা যেত স্থলবন্দরের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে স্থলপথের তুলনায় খরচ বাড়বে কয়েকগুণ। সময়ও লাগবে বেশি। 
নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে অতিরিক্ত পাড়ি দিতে হবে প্রায় চার  থেকে ১৫ গুণ বেশি পথ। এখন যদি রপ্তানিকারকরা স্থলপথে পণ্য পরিবহন করতে চান সেক্ষেত্রে ঢাকা-ভোমরা-কলকাতা-শিলিগুড়ি-গৌহাটি-করিমগঞ্জ-আগরতলা (১ হাজার ৯শ’ কিমি প্রায়) কিংবা ঢাকা-সোনামসজিদ-শিলিগুড়ি-গৌহাটি-করিমগঞ্জ-আগরতলা (প্রায় ১ হাজার ৬শ’ কিমি প্রায়) হয়ে তবেই পৌঁছতে হবে। এতে যে কার্গো পরিবহনের ভাড়া বাংলা ২০ হাজার টাকা লাগত সেটা এখন এক লাখ বা তার বেশি পড়বে। এত বেশি টাকা খরচ করে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন। 
স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বেনাপোল দিয়ে যদি রপ্তানি বন্ধ হয়, ভারত যদি কাপড় আমদানি বন্ধ করে তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আমাদের। ভারত নিজেও পোশাক উৎপাদন করে। ভারতের সঙ্গে আমরা কঠিন প্রতিযোগিতা করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। বেনাপোল দিয়ে রপ্তানি বন্ধ হলে আমাদের খরচ অনেক বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এত খরচ করে সমুদ্রপথে পণ্য নিয়ে সেটা কোনোভাবে প্রতিযোগিতা সক্ষম হবে না। আগে কখনো সমুদ্রপথে আমরা পণ্য পাঠাইনি। এখন সেটা করতে হলে আমাদের পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। দেশ থেকে প্রায় ৫০টির  বেশি কোম্পানি শুধু প্লাস্টিকপণ্য রপ্তানি করত, সেগুলো একটি বড় বাজার হারাবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পণ্য যায় ভারতে। পার্শ্ববর্তী এই দেশটি বাংলাদেশের নবম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, যা  মোট আমদানির ১৪ শতাংশের কিছু বেশি। ভারত থেকে শিল্পের কাঁচামাল বেশি আসে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ভারতের অষ্টম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। 
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর ভারতে ৫৫  কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, ১৬ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এসব পণ্যের বড় অংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়।

গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, আসবাব, সুতার উপজাত, ফল-ফলের স্বাদযুক্ত পানীয় রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এসব পণ্য রপ্তানি করে ১৬৬ প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে অধিকাংশই ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠান। 
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছর গ্রুপটি ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য পাঠানো হয়েছে স্থলপথ দিয়ে। বিধিনিষেধের কারণে রবিবার বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে ১৭ ও সিলেটের  শেওলা স্থলবন্দরে ২ ট্রাক পণ্যের চালান আটকে যায় তাদের। এসব ট্রাক ঢাকায় ফিরিয়ে এনেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছর ভারতে ৫৫ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। এই রপ্তানির ৭৬ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশি ৫৩০টি প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে বড় শিল্পগোষ্ঠী ছাড়া ছোট-মাঝারি অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। দেশটিতে শার্ট, প্যান্ট, টি শার্টের পাশাপাশি শাড়ি-লুঙ্গিও রপ্তানি হয়।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের বিষয়টি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ফলে রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানেই গুরুত্ব দিতে হবে। উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার। 
তবে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসা চলমান থাকবে বলে সম্প্রতি আশা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কী করণীয়, তা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশ থেকে যে রপ্তানি হয়, তার মূল কারণ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। আমরা আশা করছি, উভয় দেশের  ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর স্বার্থে এটা চলমান থাকবে। তবে দেশটির এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভৌগোলিক কারণে আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।

আমরা বাণিজ্য উদারীকরণে বিশ্বাসী। ব্যবসায় অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে কাজ করতে হবে। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের কাজ। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে ব্যবসা, তাতে ভারতের পাল্লাই ভারি। এক দিনে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমবে না। এটা দূর করতে  বেশ সময় লাগবে। 
এদিকে, স্থলপথে ভারত আমদানি বন্ধ করায় দেশের রপ্তানি বাণিজ্য চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, পাল্টা পদক্ষেপ না নিয়ে বরং কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারত সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তা দুই দেশের বাণিজ্যের জন্য ভালো খবর নয়। দুই দেশের মানুষের জন্যও এটা ভালো পদক্ষেপ নয়। এতে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।

ভারতের এই বিধিনিষেধের ফলে এখন আমাদের বাণিজ্য ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ, এখন অনেক পথ ঘুরে ভারতে পণ্য রপ্তানি করতে হবে। আগে সহজে বিভিন্ন স্থলবন্দর ব্যবহার করে দেশটিতে পণ্য পাঠানো যেত। কয়েক বছর ধরে ভারতে আমাদের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা সাফটার আওতায় দেশটিতে আমাদের রপ্তানি বাড়ছিল। এখন সেখানে ভাটা পড়তে পারে। 
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ  ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, নিশ্চিতভাবেই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাংলাদেশের জন্য ভারত একটি ক্রমবর্ধমান রপ্তানি গন্তব্য।

নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করবে। যেহেতু তাদের কলকাতা দিয়ে রপ্তানি করতে হয়, তাই সময় ও খরচ বাড়বে। ফলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারানোর কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

×