
উপদেষ্টাদের জন্য ২৫ গাড়ি কেনার প্রস্তাব ফেরত
উপদেষ্টা বা মন্ত্রী ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই গাড়ি কেনার জন্য নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল।
কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ বিষয়ে অনুমোদন না দিয়ে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি সার ক্রয়, স্মার্ট কার্ড কেনা, রেল প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, জি টু জি পদ্ধতিতে গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত এবং ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে তিনটি প্রস্তাব উপস্থানের জন্য নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়নি। বাকি দুটি প্রস্তাবের মধ্যে একটি প্রস্তাবে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে এবং একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়নি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা বা মন্ত্রী ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার জন্য নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয়। তবে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দেয়নি।
এই সভায় অনুমোদন দেওয়া অপর প্রস্তাবটি হলো খাদ্য নিরাপত্তায় জিটুজি ভিত্তিতে গম আমদানি। সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জিটুজি ভিত্তিতে গম ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ (১) (ক) মোতাবেক আন্তর্জাতিক দরপত্রে ক্রয় প্রক্রিয়ায় সময় হ্রাস করার প্রস্তাব দেওয়া হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করা আবশ্যক। এ অবস্থায়, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) এবং পিপিআর, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসরণে রপ্তানিকারক দেশ থেকে জিটুজি ভিত্তিতে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম কেনা এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৮৩ এর (১) (ক) অনুযায়ী দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৭ লাখ ২৫ হাজার টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৫ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসির জন্য ৪০৬ কোটি টাকার ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড ॥ এদিন ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় নির্বাচন কমিশনের জন্য ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকার ‘ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড’ ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্য ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে প্যাকেজ নম্বর জিডি-১৬.১-এর আওতায় ‘ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড’ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
ক্রয়নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই ব্ল্যাংক কার্ড ক্রয় করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকা।
রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পে ৪২২ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি ॥ দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়েছে সরকার। প্রকল্পে অতিরিক্ত কাজ বাড়ায় আরও ৪২১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টাকা ব্যয় বেড়েছে। ফলে প্রকল্পটির সোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৫১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার ৩০৩ টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-১ এর লট-১ এর পূর্ত কাজের ভ্যারিয়েশন প্রস্তাব নিয়ে আসে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনে প্রকল্পের পূর্ত কাজ সিটি জয়েন ভেঞ্চার-এর সঙ্গে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়।
চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে বাস্তবতার আলোকে নির্মাণ কাজের কিছু আইটেম হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়ায় ভ্যারিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৪২১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রকল্পে ৬০টি বক্স কালভার্টের স্থানে ১৩৬টি বক্সকালভার্ট নির্মাণ, ৫টি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, কালভার্টের স্পেনের দৈর্ঘ্য ৪৭৬ মিটারের পরিবর্তে ৮২৫ মিটার, ব্রিজের পাইলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিসহ আরও বেশ কিছু কাজ অতিরিক্ত করতে হয়েছে বলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪৭৭ কোটি টাকায় ৭০ হাজার টন সার ক্রয় ॥ রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় মরক্কো ও কাফকো থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে ২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। প্রতি টন ডিএপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৬৬৫ ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মরক্কো থেকে ডিএপি সার আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার টন। এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার টন।
এদিকে বৈঠকে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানিউলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার টন, ব্যাগড গ্র্যানিউলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৪১৭.২৫ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ২৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৫২ কোটি ৭১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইউরিয়া সার ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ লাখ টন। তার মধ্যে কাফকো থেকে ক্রয় করা হবে ৫ লাখ ৪০ হাজার টন।