ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইরানি গোয়েন্দা জালে ছেয়ে গেছে ইসরায়েল, চরম বিপদে নেতানিয়াহু সরকার!

প্রকাশিত: ০১:৫৩, ২১ মে ২০২৫

ইরানি গোয়েন্দা জালে ছেয়ে গেছে ইসরায়েল, চরম বিপদে নেতানিয়াহু সরকার!

ছ‌বি: প্রতীকী

সারা বিশ্বে গোয়েন্দা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বরাবরই আলোচনায় থাকে ইসরায়েলের মোসাদ, আমান ও শিনবেতের মতো সংস্থাগুলো। এসব সংস্থা বিশ্বের নানা প্রান্তে নিজেদের উপস্থিতি ও কার্যক্রম নিয়ে যেমন গর্ব করে, তেমনি তা প্রচারিত হয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, সিনেমা ও সিরিজে। কিন্তু এ প্রতিপক্ষের ঠিক উল্টো পথে হেঁটে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইরান, এবং তা এতটাই সফলভাবে যে এখন নিজ দেশেই চরম সংকটে পড়েছে ইসরায়েল সরকার।

সম্প্রতি ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে এক ইসরায়েলি যুবককে আটক করেছে দেশটির পুলিশ ও শিনবেত। টাইমস অফ ইসরায়েল-এর বরাতে জানা যায়, আটক ব্যক্তি মোশে আত্তিয়াস, যার বয়স মাত্র ১৮ বছর এবং বসবাস ইসরায়েলের ইয়াভনে শহরে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আত্তিয়াস দীর্ঘদিন ধরে ইরানের হয়ে একাধিক মিশনে অংশ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নিজের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে জেনেও তিনি মিশনগুলোতে যুক্ত ছিলেন—প্রধানত অর্থ উপার্জনের লোভে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো, আত্তিয়াস ইরানের এজেন্টদের নির্দেশে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের চিকিৎসারত অবস্থান এবং হাসপাতালের খুঁটিনাটি তথ্য সরবরাহ করেন। এমনকি ‘টপ সিক্রেট’ হিসেবে চিহ্নিত আরও কয়েকটি গোয়েন্দা অভিযানে অংশ নেন তিনি।

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলে নিজেদের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়েছে ইরান। এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় দেশটির পুলিশ বিদেশি সংস্থার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের যোগাযোগে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, এমনকি প্রণয়ন করা হয়েছে আজীবন কারাদণ্ডের আইন। তবে বাস্তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি নেতানিয়াহু সরকারের।

চমকপ্রদভাবে, শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও জড়িয়ে পড়ছে গুপ্তচরবৃত্তিতে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই সেনাকে আটক করে পুলিশ ও শিনবেত। এদের মধ্যে ইউরি এলিয়াস নামের এক সেনা আয়রন ডোম ইউনিটে কর্মরত ছিলেন এবং ইরানিদের কাছে সরবরাহ করছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য ও ভিডিও। তার কাছ থেকে এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেমের গোপন ভিডিওসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। এরপর আটক করা হয় আরেক সেনা, জর্জি এন্ড্রেভকে, যিনি মাত্র ৫০ ডলারের বিনিময়ে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে ইউরি পেয়েছিলেন আড়াই হাজার ডলার।

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে প্রায় ৩০ জন ইসরায়েলিকে আটক করা হয়, যাদের অধিকাংশই ইহুদি ধর্মাবলম্বী। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শুরুতে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হতো, যা ধীরে ধীরে বড় ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি ও হত্যাকাণ্ডে পরিণত হতো।

এরও আগে, একই বছরের অক্টোবরে, নেভাটিম ও রামাত এয়ারবেইজের তথ্য পাচার ও ছবি পাঠানোর অভিযোগে সাত ইসরায়েলিকে আটক করে পুলিশ। এর কিছুদিন পরই ইরান ও হিজবুল্লাহ ওই ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের একাধিক গুপ্তচর সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি এতটাই দক্ষ ও ভয়ংকর যে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা বলয়ের গভীরে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারছে। এর ফলে দেশটির গোয়েন্দা নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে এবং নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে প্রতিদিনই।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=WtOVOHC2oeI

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×