ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেকায়দায় পড়বে সেভেন সিস্টার্স, নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতি হবে ভারতের

প্রকাশিত: ০১:৫২, ২১ মে ২০২৫

বেকায়দায় পড়বে সেভেন সিস্টার্স, নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতি হবে ভারতের

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারতের দেওয়া স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েছে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার্স’ অঞ্চলও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে নির্ভরশীল আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও মিজোরামের বাজারে দেখা দিচ্ছে অস্থিরতা।

চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে ভারতের পক্ষ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর ফলে শত শত ট্রাক বিভিন্ন বন্দর এলাকায় আটকে রয়েছে, যেগুলোর গন্তব্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্য। এর আগে এপ্রিলের শুরুতে ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাও স্থগিত করে। পাল্টা জবাবে বাংলাদেশও ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, “শেখ হাসিনা উৎখাতের পর ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি আর বন্ধুত্বপূর্ণ থাকছে না। এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত ক্ষতিগ্রস্ত করবে দুই পক্ষকেই।”

বাংলাদেশ প্রতিবছর ভারত থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, আর রপ্তানি করে মাত্র দেড় বিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে বাংলাদেশের বেভারেজ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাবপত্রের চাহিদা গত এক দশকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, “রপ্তানি মাথায় রেখেই আমরা ক্যাপাসিটি বিল্ড করেছি। যদি ভারতে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের প্রোডাকশন কমাতে হবে, অনেক শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়বে।”

আরএফএল গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার সুমন কুমার লোহ বলেন, “আমাদের ব্যবসার সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বহু ব্যবসায়ী যুক্ত। তাদের লগ্নিকৃত অর্থ ও বাণিজ্য এখন ঝুঁকিতে পড়েছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও প্লাস্টিক পণ্য খাতে ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। পাশাপাশি ভারতীয় ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কারণ বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক পণ্য অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় বাজারে সিন্ডিকেটের দাপট বাড়বে এবং পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে।

ইলিয়াছ মৃধা বলেন, “নতুন বাজার খুঁজে পেলেও সেখানে পণ্য প্রতিষ্ঠা করতে বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশনসহ ব্যাপক খরচ করতে হয়।”

সুমন কুমার লোহ বলেন, “একই প্রোডাক্ট সব দেশে পাঠানো যায় না। ইন্ডিয়াতে যে পণ্য জনপ্রিয়, তা ইউরোপ বা গালফে একইভাবে গ্রাহক পাবে না।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এমন পাল্টাপাল্টি অশুল্ক বাধা থেকে সরে আসা জরুরি। শত্রুতা নয়, সম্পর্ক মজবুত করাই হবে টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি।

অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। ভারত যদি তা না চায়, সেটি তাদের বিষয়। তবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই পক্ষেরই মঙ্গল বয়ে আনবে।”

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে:

  • পোশাক: ৫৫ কোটি ডলার

  • প্রক্রিয়াজাত খাদ্য: ১৬ কোটি ডলার

  • প্লাস্টিক পণ্য: ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার

  • তুলা ও তুলা সুতার ঝুট: ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার

  • আসবাবপত্র: ৬৫ লাখ ডলার

এ পণ্যের অধিকাংশই স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। ফলে চলমান নিষেধাজ্ঞা শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, আঘাত করছে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃনির্ভরশীল অর্থনীতিকেও।

সূত্রঃ https://youtu.be/1tEtKgGwFdo?si=9Oh2dMwOPloIHWq5

ইমরান

×