মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থেকে এ ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ব্যাংকক থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। যৌথ সভা শেষে ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।
ফখরুল বলেন, বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সরকারের মধ্যে কিছু অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের যখন একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখন একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন, জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রুখে দাঁড়াতে হবে। সীমান্তের ওপার থেকে যে ষড়যন্ত্র চলছে সে ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে। কেউ যেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিলীন করতে না পারে।
ফখরুল বলেন, আজকের যৌথ সভাটি আমি অত্যন্ত মূল্যবান ও তাৎপর্যপূর্ণ সভা বলে মনে করি। কারণ, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া ও জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়েছে। তাই বিএনপির ওপর এখন গুরু দায়িত্ব।
অবশ্য বিএনপির ওপর সবসময়ই গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন, এখন তরুণ নেতা তারেক রহমান নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের স্বপ্নগুলোকে বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্যে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ফখরুল বলেন, আমি সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের, যে যেখানে আছেন তাদের প্রতি অনুরোধ করব অত্যন্ত সচেতনভাবে আমরা যেন এসব বিষয় মনে রাখি। একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা যেন কেউ কখনো কেড়ে নিতে না পারে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন কেউ কখনো বিনষ্ট করতে না পারে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আর কেউ যেন কখনো ফ্যাসিবাদ-স্বৈরাচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে না পারে সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।
জিয়াউর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবনকর্ম তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ার জন্য যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল সেই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই জাতির আমরা এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।
আজকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যারা বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিল, যারা এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশকে আবারও জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্যে, বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার জন্য এ সময়ে আমাদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বার বার স্মরণ করতে হবে।
ফখরুল বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, প্রায় ১৭শ’ নেতাকর্মীকে ‘অ্যানফোর্স ডিজএপিয়ারেন্সের’ মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আজকে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা সবাই মিলে একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করব।
জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচি ॥ ৩০ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি ও অসহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রিজভী বলেন, যেহেতু ৭ জুন কোরবানি ঈদ। সেজন্য আমাদের কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কর্মসূচি হবে ৮ দিন। অর্থাৎ ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় শের-ই বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে চাল-ডাল ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে চাল-ডালসহ ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। ছাড়া ওইদিন মসজিদে মসজিদে গণদোয়া করা হবে।
কর্মসূচির মধ্যে আরও আছে, ২৭ মে ঢাকায় তারুণ্যের সেমিনার ও ২৮ মে তারুণ্যের সমাবেশ। ২৯ মে বিকেল তিনটায় রাজথানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুইদিন নয়া পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির পতাকা অর্ধনমিত রেখে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করবে এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারাদেশে জেলা ও উপজেলা-থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক দল বিপথগামী সৈন্যের গুলিতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। এর পর থেকে প্রতিবছর বিএনপি এ দিনটিকে জিয়াউর রহমানের ‘শাহাদাৎ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
বিএনপির যৌথ সভায় ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককের রুটনিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যৌথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
