
স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের স্পেসএক্স পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারন্টে পরিষেবা স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এই সেবার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সব জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুর প্রত্যাশার বাস্তবায়ন হলো।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মঙ্গলবার এ কথা জানান।
তিনি বলেছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে-স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটিতে ৬০০০ টাকা, অপরটিতে ৪২০০। তবে, সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪৭ হাজার টাকা এককালীন খরচ করতে হবে। এখানে কোনো স্পিড ও ডেটা লিমিট নেই। ব্যক্তি পর্যায়ে ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করা যাবে। স্টারলিংক ইন্টারনেটে খরচ হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে।
পাশাপাশি, যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার অপটিক কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাবে, এনজিও, ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহারের নিশ্চয়তা পাবেন।
স্টারলিংকের ইন্টারনেট জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হবে না ॥ স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা কোনোভাবে বিঘিœত হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, ‘স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান। এ সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য স্টারলিংক কোম্পানিকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, যার দশ দিন গত হয়েছে। অতিবাহিত হলেই তাদের লোকাল গেটওয়ে বাধ্যতামূলক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি ডিভাইসের ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স আছে তাই ডিভাইসের বিষয়ে এনওসি লাগবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, স্টারলিংকের ইন্টারনেটের কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিঘিœত হবে না। এর জন্য আমরা দুটি নিরাপত্তার বিষয় রেখেছি। একটি হচ্ছে স্টারলিংককে লোকাল গেটওয়ে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ তাদের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করতে হবে এবং সেই গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে গেটওয়ে হয়ে ইন্টারনেট যাবে।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি, তারা চাইলে বিকল্প হিসেবে বিদেশি গেটওয়ে রাখতে পারবে, কিন্তু অ্যাকটিভ ডিভাইস মনিটর করার জন্য, সেখান থেকে রাজস্ব আয়ের জন্য এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশের যাদের লাইসেন্স গেটওয়ে আছে, তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য লোকাল গেটওয়ে ব্যবহার করতে পারবে। সেখানে এলআইসি বসাতে হবে অর্থাৎ আমাদের আইনে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যে ইন্টারসেপ্টের বিধান আছে, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা থেকে সেই কমপ্লায়েন্স মানতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী আরও বলেন, পাশাপাশি অননুমোদিত ডিভাইস যাতে আমাদের সীমান্তের ভেতর না প্রবেশ করতে পারে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায়, সেজন্য আমরা বলেছি ডিভাইসগুলোর জন্য এনওসি নিতে হবে। যেহেতু হাজার হাজার ডিভাইস আলাদা করে এনওসি দিতে গেলে প্রক্রিয়াগত জটিলতা তৈরি হবে, এজন্য গ্রুপ অব ডিভাইসকে একই এনওসির আওতায় ব্যাচ করে আনা যাবে।
তিনি জানান, তবে আমরা আজ বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক চালু করছি। এটার জন্য তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছে। এর জন্য তাদের ৯০ দিনের একটি সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। গ্রাউন্ড স্টেশন করতে কিছুটা সময় লাগে। এরই মধ্যে তাদের ১০ দিন সময় পেরিয়ে গেছে, আর ৮০ দিন আছে। এই সময়ে তাদের লোকাল গেটওয়ের এবং এলআইসির যে বাধ্যবাধকতা সেটি পালন করতে হবে। এরই মধ্যে এনটিএমসির সঙ্গে তাদের একটি সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের দাম কতটা সহনীয়- এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, একটি ভবনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন অনেক অ্যাপার্টমেন্ট, কন্ডোমিনিয়াম, ফ্ল্যাট থাকে। তারা কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট বা তলা মিলে এই সেবা ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২০ মিটার। সব মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এককালীন খরচ কিছুটা বেশি হলেও এটি যখন সমবায় ভিত্তিতে বা ভাগাভাগি করে ব্যবহৃত হবে, তখন এই ব্যয় তেমন বোঝা মনে হবে না।
যেভাবে স্টারলিংক সংযোগ নেওয়া যাবে ॥ বাংলাদেশের গ্রাহকরা সরাসরি স্টারলিংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ংঃধৎষরহশ.পড়স এ গিয়ে অর্ডার দিতে পারবেন। অর্ডার করতে প্রথমে আপনার ঠিকানা দিয়ে সেখানে এই সেবা পৌঁছাবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর একটি সার্ভিস প্ল্যান বেছে নিয়ে হার্ডওয়্যার কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
স্টারলিংক সংযোগের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কিটে থাকে একটি স্যাটেলাইট ডিশ, ওয়াইফাই রাউটার, মাউন্টিং ট্রাইপড ও ক্যাবল। এটি সেটআপ করা অত্যন্ত সহজ। প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়ে স্যাটেলাইট ডিশটির ফাঁকা জায়গায় আকাশের দিকে মুখ করে স্থাপন করতে হবে।