ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘গোল্ডেন ডোম’ এর আওতায় মহাকাশে অস্ত্র স্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২১ মে ২০২৫

‘গোল্ডেন ডোম’ এর আওতায় মহাকাশে অস্ত্র স্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র

ছবিঃ সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচির সবচেয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যার আওতায় প্রথমবারের মতো মহাকাশে অস্ত্র স্থাপন করা হবে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, তিনি “আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্থাপত্য পরিকল্পনা” বেছে নিয়েছেন, যা “হাইপারসনিক মিসাইল, ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং উন্নত ক্রুজ মিসাইল” ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তৈরি।

ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আমেরিকান জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আমি একটি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ করব, যা আমাদের মাতৃভূমিকে বিদেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি থেকে রক্ষা করবে।”

তিনি আরও জানান, গোল্ডেন ডোম সিস্টেমে থাকবে “মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর এবং ইন্টারসেপ্টর”।

ট্রাম্প বলেন, “একবার সম্পূর্ণ নির্মিত হলে, গোল্ডেন ডোম এমনকি পৃথিবীর অন্য প্রান্ত বা মহাকাশ থেকেও উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করতে পারবে। আমরা ইতিহাসের সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করব।”

এই ঘোষণা এল ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশে কর্মসূচির সূচনা করার চার মাসেরও কম সময় পরে। স্পেস ফোর্সের ভাইস চিফ অব স্পেস অপারেশন্স জেনারেল মাইকেল গেটলাইনকে এই কর্মসূচির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে হেগসেথ এই পরিকল্পনাকে “গেম চেঞ্জার” এবং “আমেরিকা ও আমেরিকানদের নিরাপত্তায় প্রজন্মগত বিনিয়োগ” হিসেবে আখ্যা দেন।

হোয়াইট হাউস এখনও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি, এবং জানা গেছে, পেন্টাগন এখনও এর সক্ষমতা ও চাহিদা নির্ধারণে কাজ করছে।

ব্যয় ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

এই মাসের শুরুতে কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস অনুমান করেছে, গোল্ডেন ডোম-এর শুধু মহাকাশ-ভিত্তিক উপাদানগুলোর খরচ আগামী ২০ বছরে ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, একটি কার্যকর মহাকাশ-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিপুল সংখ্যক সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর প্রয়োজন হবে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের সামরিক প্রযুক্তি আরও জটিল হয়ে উঠায়।

ট্রাম্প বলেন, “আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে। অর্থাৎ, আমরা এটি তিন বছরের মধ্যেই শেষ করব।”

তিনি আনুমানিক মোট খরচ ১৭৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলে ধারণা দেন এবং জানান, এই সিস্টেম নির্মাণে বিদ্যমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

তবে এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন নিশ্চিত হয়নি। মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, তিনি কংগ্রেসে চলমান একটি কর হ্রাস বিলের মাধ্যমে এই সিস্টেমের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার চাইছেন, যদিও আলোচনার প্রেক্ষিতে এই পরিমাণ কমে যেতে পারে।

প্রকল্পের মোট খরচে ভিন্নতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, ট্রাম্পকে “মিডিয়াম”, “হাই” এবং “এক্সট্রা হাই” — এই তিনটি সংস্করণ দেওয়া হয়েছিল।

এই স্তরগুলো নির্ধারণ করেছিল কতগুলো স্যাটেলাইট, সেন্সর এবং ইন্টারসেপ্টর মহাকাশে স্থাপন করা হবে। সংবাদ সংস্থাটি জানায়, ট্রাম্প “হাই” সংস্করণটি বেছে নেন, যার প্রাথমিক খরচ ৩০ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে।


মঙ্গলবার গোল্ডেন ডোম পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা, যার অর্থায়নের একটি অংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৮০-এর দশকে কোল্ড ওয়ার চলাকালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভের কথা, যেখানে রেগান পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধে মহাকাশ-ভিত্তিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা সত্যিকার অর্থেই রেগান যে কাজ শুরু করেছিলেন ৪০ বছর আগে, তা সম্পন্ন করতে যাচ্ছি— চিরতরে আমেরিকার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির অবসান ঘটাতে যাচ্ছি।”

তবে মহাকাশ-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা, এর বিশাল খরচ এবং এটি একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারে কিনা— তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।

মাস্ক ও স্বার্থের সংঘর্ষ

এছাড়া ডেমোক্র্যাটরা ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ প্রতিষ্ঠানটি এই সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরির দৌড়ে শীর্ষে রয়েছে।

৪২ জন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য এক চিঠিতে মাস্কের ভূমিকায় তদন্ত দাবি করে বলেন, “গোল্ডেন ডোম চুক্তিতে যদি মাস্ক অযৌক্তিক প্রভাব খাটান, তাহলে এটি স্বার্থের সংঘর্ষ বিষয়ক নিয়ম ভঙ্গের আরেকটি উদ্বেগজনক উদাহরণ হবে।”

উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কোম্পানির নাম বলেননি, তবে তিনি বলেন, এই সিস্টেমটি আলাস্কা, ইন্ডিয়ানা, ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়ার শিল্পখাতে নতুন গতি আনবে।

তিনি আরও জানান, “কানাডা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা এই প্রকল্পে অংশ নিতে চায়। তাই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”

মুমু

×