ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাফালের গোপন কোড ভারতে হস্তান্তর করবে না ফ্রান্স, ভারতের দুশ্চিন্তা!

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২১ মে ২০২৫

রাফালের গোপন কোড ভারতে হস্তান্তর করবে না ফ্রান্স, ভারতের দুশ্চিন্তা!

ছবি:সংগৃহীত

ফ্রান্সের রাফাল যুদ্ধবিমানের সোর্স কোড ভারতের কাছে হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নতুন করে কৌশলগত টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। ভারত বহুদিন ধরেই রাফালের মূল সফটওয়্যার কোডের অধিকার চেয়ে আসছে, যাতে দেশীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র ও প্রযুক্তি, যেমন ‘অস্ত্রা’ বিয়ন্ড-ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ মিসাইল, ‘রুদ্রম’ অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল এবং স্মার্ট মিউনিশনসমূহ, যুদ্ধবিমানে সংযুক্ত করা যায়। কিন্তু ফরাসি নির্মাতা দাসোঁ অ্যাভিয়েশন দৃঢ়ভাবে এই কোড হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। এতে ভারতের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতির অগ্রগতিতে বড় বাধা তৈরি হয়েছে।

 

ভারতের “আত্মনির্ভর ভারত” কর্মসূচি অনুযায়ী, দেশের নিজস্ব গবেষণা ও উন্নয়ন সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে সামরিক শক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অথচ রাফালের সোর্স কোড না পাওয়ায় বিমানটির সফটওয়্যার ও মিশন সিস্টেমে স্বাধীনভাবে দেশীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে নতুন অস্ত্র সংযোজন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর প্রযুক্তি সংহতকরণ বা দ্রুত যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে অভিযোজন, সব কিছুতেই ফরাসি অনুমোদনের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। ফ্রান্সের আশঙ্কা, এই কোড হস্তান্তর করলে অন্যান্য রাফাল গ্রাহক যেমন মিশর, কাতার বা ইন্দোনেশিয়াও একই দাবি তুলতে পারে। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা হুমকি, প্রযুক্তি চুরি এবং রফতানি বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের ভয়ও প্রকাশ করেছে।

 

 

রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত। এতে রয়েছে সুপারক্রুজ ক্ষমতা, AESA রাডার, SPECTRA ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট, IRST, হেলমেট-মাউন্টেড ডিসপ্লে, উন্নত ডেটালিংক ও বিভিন্ন প্রিসিশন অস্ত্র। ভারত ২০১৬ সালে ৭.৮ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে ৩৬টি রাফাল কেনে, যেগুলো পাকিস্তান ও চীন সীমান্তঘেঁষা দুইটি বেসে মোতায়েন করা হয়েছে। ২০২৫ সালে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফাল-এম কেনার ৭.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা প্রমাণ করে যে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এখনও জোরালো রয়েছে।

তবে সোর্স কোড ইস্যুতে ভারতের ভেতরে এখন একটি বড় আলোচনা চলছে, প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্ব আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। অতীতে মিরাজ ২০০০ বিমানের ক্ষেত্রেও কোড না পাওয়ায় দেশীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী এখন নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান AMCA এবং উন্নত Tejas Mk2 প্রকল্পে জোর দিচ্ছে, যাতে পরিপূর্ণ সফটওয়্যার ও সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে থাকে।

বিশ্বের অন্যান্য উদাহরণে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে F-35 এর সফটওয়্যারে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা দিয়েছে, রাশিয়া ভারতের Su-30MKI-তে দেশীয় অস্ত্র ও প্রযুক্তি সংযুক্তির অনুমতি দিয়েছে, আর সুইডেন ব্রাজিলকে Gripen-E যুদ্ধবিমান যৌথভাবে তৈরি ও পরিবর্তনের পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, কেন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি কৌশলগত মিত্র দেশ হয়েও ভারতকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?

 

এই বাস্তবতা ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিনির্ধারকদের সামনে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান থাকলেই যথেষ্ট নয়, যদি সেই বিমানের সফটওয়্যার ও ডিজিটাল কাঠামোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকে। যুদ্ধের মাঠ যত বেশি সফটওয়্যার-নির্ভর হয়ে উঠছে, ততই সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি হয়ে উঠছে প্রকৃত সার্বভৌমত্বের মাপকাঠি।

আঁখি

×