
ছবি: জনকন্ঠ
জীবনটা যেখানেই শেষ হোক, সেই শেষ যাত্রার প্রস্তুতিতে নিঃস্বার্থ এক সেবকের নাম—মনু মিয়া। কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি গ্রামের এই মানুষটি ৪৯ বছরে খনন করেছেন তিন হাজারেরও বেশি কবর। প্রতিটি কবরের হিসাব রেখে চলেন একটি ডায়েরিতে।
কিন্তু সংখ্যার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটি, তা হলো—তিনি জীবনের শেষ বিদায়ে কাউকে কোনোদিন অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা দেননি। দা, কুদাল, কুন্তি আর তার বিশ্বস্ত ঘোড়াকে সঙ্গী করে মৃত্যুসংবাদ পেলেই ছুটে যান প্রয়োজনীয় কাজে। তার ভাষায়, “মানুষের এই শেষ সময়ে পাশে থাকাটাই আমার ইবাদত। আমি এই কাজ করি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।”
মনু মিয়ার জীবন শুরু থেকেই সংগ্রামের। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়ে নেমে পড়েছিলেন জীবনযুদ্ধে। কোনদিন কারো কাছে হাত পাতেননি। সংসারে আছেন শুধু স্ত্রী ও এক সময়কার তার অতি প্রিয় লাল ঘোড়া—যার সঙ্গে ছিল দীর্ঘ ৩০ বছরের সম্পর্ক।
কিছুদিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এ সময় কে বা কারা যেন তার ঘোড়াটিকে হত্যা করে। হাসপাতালে বসেই এই হৃদয়বিদারক খবর পান, তখনো মনু মিয়া ভেঙে পড়েননি। বরং অন্যদের সান্ত্বনা দিতে দেখা গেছে তাকে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকেই এগিয়ে আসেন নতুন ঘোড়া কিংবা আর্থিক সহায়তা দিতে। তবে মনু মিয়া তা গ্রহণ করতে রাজি হননি। তার এই মানসিকতার পেছনে রয়েছে একটি আধ্যাত্মিক ইতিহাস।
জয়সিদ্ধি গ্রামেরই একজন বিশিষ্ট কামেল বুযুর্গ ছিলেন মিসির মাওলানা, যাঁর দরবার ছিল মনু মিয়ার বাড়িতে। তার ভাবশিষ্য হাজী সুরত আলীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন মনু মিয়া। হাজী সুরত আলীর কথাই ছিল তার জীবনের দিকনির্দেশনা। সেই আদর্শেই অনুপ্রাণিত হয়ে আজও তিনি মানবসেবায় নিয়োজিত।
মনু মিয়া বলেন, “আমি কারও কাছ থেকে কিছু নিই না। চাই না। আমি শুধু সবার দোয়া ও ভালোবাসা চাই।”
এই নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, নিরব অনুপ্রেরণা আর আধ্যাত্মিক আদর্শের ধারক মনু মিয়া সত্যিই কিশোরগঞ্জের জীবন্ত কিংবদন্তি।
মুমু