ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

আনন্দ বেদনার কাব্য

অলিউর রহমান ফিরোজ

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ২৩ জুলাই ২০২৫

আনন্দ বেদনার কাব্য

বর্ষার জলে আমাদের ধূলিধূসরিত প্রকৃতি যেমন রূপ-ছন্দ খুঁজে পায়, তেমনি খেটে খাওয়া মানুষের কিছু বিড়ম্বনাও তৈরি হয়। বর্ষার গ্রাম বাংলার চিরায়ত দৃশ্যগুলো হয় অবারিত। বর্ষার বৃষ্টিতে গ্রামের খাল-বিল, নদী-নালায় জলে থাকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বর্ষার জলাশয়গুলো গ্রামের সৌন্দর্যকে আরও বর্ণিল করে তোলে। বর্ষার প্রকৃতিতে কালো মেঘের ওড়াউড়ি মনকে আরও সজীব করে তুলে এ সময়। এমনও দিনে বারান্দায় জলচৌকি নিয়ে এক কাপ চা যেন অমৃতের স্বাদ এনে দেয়। টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন গানের সুর ছন্দ তৈরি করে। গাছেরা গাছের বৃষ্টির পরশ পেয়ে নিজেদের ভিজিয়ে নেয়। তার জল তৃষ্ণা মিটিয়ে তার পত্র-পল্লবকে আরও সতেজ করে তোলে। গাছের পাখিরা এ সময় জলের ছাটায় নিজেদের পাখনাগুলো মেলে ধরে। বৃষ্টির সুখ এ সময় উপভোগ করতে দেখা যায় তাদের। বর্ষার জলে বিলের পুঁটি, শিং, কই মাছেরা জলকেলিতে ব্যতিব্যস্ত থাকে তারা। কিন্তু প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য খেটে খাওয়া মানুষকে বড়ই ভোগায়। তারা কাজের জন্য বাইরে বের হতে পারে না। দিন আনা দিন খাওয়া গরিব মানুষের এসময়টা অনেক অভাব-অনটন দেখা দেয়। তবে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষের ভোগান্তি একটু বেশি লক্ষ করা যায়। যারা সড়কের আশপাশে দোকানের পসরা সাজায় কিংবা একজন রিক্সাওয়ালা তার তো ঘরে বসে থাকার কোনো উপায় নেই। সামান্য বর্ষার বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো নদীতে রূপ নেয়। 
২০০৭ সালে ঢাকার অবস্থা যেমনই জলমগ্ন দেখেছি এখনো তেমনটাই রয়ে গেছে। সড়কগুলো উন্নত করা হয়েছে। কিন্তু ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেই আগেরই মতো। খালা-নালা পরিষ্কার করা হলেও মানুষের সচেতনতার অভাবে আবার তা প্লাস্টিকের দূষণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে সড়কের নালা এবং ড্রেনেজ বন্ধ হয়ে মহাভোগান্তির শিকার হচ্ছে ঢাকাবাসী। কোনো কোনো সিটি করপোরেশন হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীভূত করার জন্য। কিন্তু লুটপাটের কারণে তা কোনো কাজে আসেনি। ২০ মিনিটের এক পসলা বৃষ্টির জলেই পুরো ঢাকা শহর জলের নিচে তলিয়ে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এ সময় সড়কে চলতে গিয়ে সড়কের গাড়িগুলো বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। আর ভোগান্তির মহাজাগরণে পড়ছে চালকরা, সড়কে চলাচল করা যাত্রীরা। বর্ষার মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য ওয়াসা থেকে খাল ও ড্রেনেজের দায়িত্ব নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তা কি আদৌ কোনো কাজে এসেছে? জনবল সংকটে ভুগে তা এখন লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঢাকার আশপাশের খাল-নর্দমা আগের ওয়াসাকেই দেওয়া হোক। জনগণের টাকা খরচ হয়। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি মহা পরিকল্পনার অভাবে তা থমকে যায়। তাই বর্ষার জলাবদ্ধতার হাত থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষার্থে নিতে হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। নইলে জনগণের টাকা খরচ হবে ঠিকই ভোগান্তি আর কমবে না। 

রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে

প্যানেল/মো.

×