ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সহমর্মিতার বৃষ্টিতে ভিজুক হৃদয়

নোবেল জেভিয়ার

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২৩ জুলাই ২০২৫

সহমর্মিতার বৃষ্টিতে ভিজুক হৃদয়

বর্ষা আসে নিস্তব্ধ দুপুরে, হঠাৎ কালো মেঘের পাহাড় নিয়ে, বদলে যাওয়া ও অদ্ভুত নীরবতা নিয়ে। দিগন্তরেখা ঝাপসা করে দেয় বৃষ্টির টানা পর্দা। সেই পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে কত না বলা গল্প, না-বলা স্মৃতি। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে, এক সুর, এক অনুভূতির ভাষা যা আমাদের হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে।
ঘরের ভেতর বসে জানালার কাঁচে বিন্দু-বিন্দু জল জমতে দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বাদল দিনে চায়ের কাপ, সঙ্গে গরম খিচুড়ি ও ভাজা ইলিশ একটি বৃষ্টিমুখর দুপুরের সহজ সুখ। এমন দিনে মনের কোণে জমে থাকা পুরানো চিঠি খুঁজে বের করে ফেলে আসা গল্পগুলো নতুন করে পড়া যায়। আবার কত মানুষ কাগজ-কলম নিয়ে বসে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সুরে শব্দগুলোকে নিজেদের মতো করে গেঁথে ফেলে। কেউ লিখে ফেলে দীর্ঘ এক কবিতা, কেউ ছোট গল্পের শুরু খুঁজে পায়, কেউ বা গিটারের তার ছুঁয়ে খুঁজে পায় ভেজা বিকেলের গান। এভাবে বর্ষার দিনে সৃষ্টি ও স্মৃতি এক সুতোয় গাঁথা পড়ে। বৃষ্টির শব্দ এক অদ্ভুত সঙ্গীত হয়ে বাজে। অজানা কোনো স্মৃতিকে ডাক দেয় শৈশবের স্কুল মাঠ, ভেজা পায়ের ছাপ, গ্রামের মেঠোপথ, ভরা নদীর ঘাট। একে-একে সব দৃশ্য ফিরে আসে। মানুষের ভেতরকার শূন্যতা বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে যায়।
তবে, এই সুন্দর ছবির আড়ালেও রয়েছে নির্মম বাস্তবতা। আমরা যখন নিরাপদ ঘরে বসে চা খাই, তখন কত শত মানুষ ভরা বর্ষায় রাস্তায়, মাঠে বা নির্মাণস্থলে ভিজে শ্রম দেন। কৃষকরা কাদায় পা ডুবিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে ধান রোপণ করেন, দিনমজুর ভেজা শরীরে ইট বহন করে, রিকশাচালক কাকভেজা হয়ে যাত্রী বহন করে। তাদের কষ্টের বিনিময়েই শহরের চাকা চলে, আমাদের আরামের আয়োজন হয়। এদের অবদান ছাড়া আমাদের আরাম ও আনন্দের জীবন কখনই সম্ভব হতো না। তাই আমাদের উচিত এই পরিশ্রমী মানুষদের প্রতি সম্মান দেখানো, কথা-বার্তায় সহমর্মিতা রাখা এবং তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য দেওয়া। বৃষ্টির দিনে তাদের ভোগান্তি যেন আমাদের আরাম-আয়েশের আড়ালে ঢাকা না পড়ে।
তাই বর্ষার দিনে শুধু কবিতা নয়, প্রয়োজন সহমর্মিতারও। তাদের প্রতি আমাদের আচরণ হোক নম্র, ভালো ব্যবহার হোক স্বাভাবিক। তাদের শ্রমের ন্যায্য দাম যদি আমরা না দেই, তবে, আমাদের এই সৃষ্টি, এই বৃষ্টির গান, এই কবিতার ধারা সবই অপূর্ণ থেকে যাবে। সৃষ্টির সঙ্গে যদি মানবিকতা না থাকে, তবে, সেই সৃষ্টি পূর্ণতা পায় না। তাই বৃষ্টি উপভোগ করুন, স্মৃতি ও সৃষ্টিকে আপন করে নিন, আর যে মানুষগুলো আপনাকে এই স্বস্তি উপহার দেয়, তাদের প্রাপ্য সম্মান ও মূল্য দিন।
বর্ষা ঝরুক অবিরাম, শব্দের মতো ঝরাক মনের কথা। সহমর্মিতার বৃষ্টিতে ভিজে থাকুক হৃদয়, এই ভেজা পৃথিবীতে সবার দুঃখটুকুও ধুয়ে যাক অঝোর ধারায়। বর্ষার সৃজনশীলতা ও কবির নতুন কবিতা পৌঁছে দিক পরিশ্রমী মানুষকে মর্যাদাদানের বার্তা। প্রতিষ্ঠিত হোক সহমর্মিতার বৃষ্টিতে ভেজা হৃদয়ের গল্প॥ 
ময়মনসিংহ থেকে

প্যানেল/মো.

×