ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বর্ষায় সৃজনছন্দ

আরাফাত রিলকে

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ২৩ জুলাই ২০২৫

বর্ষায় সৃজনছন্দ

বৃষ্টি হলে মনটা একেবারে উদাস হয়ে যায়। কেমন একটা বিমর্ষতা ও নষ্টালজিক অনুভূতি নিয়ে আসে। বৃষ্টির সময় হলেই যারা ছবি আঁকে, তাদের ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে। যারা কবিতা লেখে, তাদের কবিতা লেখতে ইচ্ছে করে।  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে, ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’। আলাউদ্দিন আল আজাদের বৃষ্টি নামেই একটি সুন্দর ছোট গল্প আছে। গুস্তাভ কাইলি। বোটের প্যারিস স্ট্রিট, রেইনি ডে, ভিনসেন্ট ভ্যান গগের রেইন নামের অসংখ্য চিত্রকলা বৃষ্টি নিয়ে আঁকা হয়েছে। বাংলার বৃষ্টিতে আরেকটা সৌন্দর্য হচ্ছে কদমফুল। রবিঠাকুরের এই নিয়ে গান আছে, ‘বাদলও দিনেরও প্রথমও কদম ফুল, করেছো দান’। এছাড়াও বকুল, কেয়া, জুঁই, কামিনী, বেলি, দোলনচাঁপা, রজনীগন্ধা, শাপলাসহ বেশকিছু ফুল বর্ষার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে শিল্পসাহিত্যের অনেক আয়োজন হয়ে থাকে। যেমন বর্ষার কবিতা, বর্ষার গল্প, বর্ষার চিত্রকলা, বর্ষার গান। আবার তীব্র দাবদাহের পর বৃষ্টির জন্য প্রার্থনাও হয়ে থাকে। বৃষ্টিকে উপজীব্য করে অনেক বিখ্যাত গান আছে। বারী সিদ্দিকীর গান, ‘আষাঢ় মাইসা ভাসা পানিরে’, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর, ‘আজ ওই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়’সহ অসংখ্য গান যা বলে শেষ করা যাবে না। বৃষ্টির সময় রাস্তাঘাটের ধুলোবালি পরিষ্কার হয় যেমন, তেমন মনের ধুলোবালিও কিছুটা দূর হয়। কংক্রিটের ভেতর আবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে মানুষ কিছুটা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। বৃষ্টিতে শিশুরা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। অনেক সময় বড়রাও শখ করে বৃষ্টিতে ভেজে। বৃষ্টি যেনো মনের ভেতর শিশুর উন্মাদনা নিয়ে আসে। এই উন্মাদনা মানুষকে শিল্পের ভেজা উঠোনে দৃষ্টি রাখতে বলে। এতদসত্ত্বেও বৃষ্টি কিন্তু সবার জন্য আশীর্বাদ নয়। খেটে খাওয়া মানুষ, যারা দিন এনে দিন খায়, তাদের জন্য টানা বৃষ্টি এক ধরনের অভিশাপও। অতিবৃষ্টিতে অনেক সময় ফসলেরও ক্ষতি করে। নদীপাড়ের মানুষেরা বৃষ্টিতে একটু বেশি কষ্ট সহ্য করে। অনেক সময় বন্যা হয়, নদীর পাড় ভেঙে যায়, টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে যায়। বৃষ্টির সময় তাদের নিয়েও ভাবা জরুরি মনে করি।
ময়মনসিংহ থেকে

প্যানেল/মো.

×