ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

অর্থ উপদেষ্টার আশাবাদ

ভালো ভাবমূর্তির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ২৪ জুলাই ২০২৫

ভালো ভাবমূর্তির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমাবে

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, সেই শুল্কের হার কিছুটা কমানো হবে বলে আশা করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভালো আছে। কারণ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির বকেয়া পরিশোধ করে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এতে মোট ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা। কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এক লাখ ৪০ হাজার টন সার কেনা হবে এবং এতে ব্যয় হবে ৮৯২ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৭ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৯১ টাকা ৮৮ পয়সা কেজি দরে এই মসুর ডাল কিনতে মোট ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর পাশাপাশি এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। 
বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি ও মেটলাইফের বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে পাল্টা শুল্ক (৩৫ শতাংশ) আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, সে হার দেশটি কিছুটা কমাবে হবে বলে আশাবাদী সালেহউদ্দিন আহমেদ।

আশাবাদী হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘাটতি তো খুব কম। ৬৫০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের আর আট দিন বাকি। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে আলোচনা ও দর-কষাকষি করতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কেমন, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আলোচনা করতে আগামী ১ আগস্টের আগেই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে নীতিগত অনুমোদনের পর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা একটু বৈচিত্র্য আনতে চাচ্ছি। অনেক সময় রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে গম আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন আমাদের আমদানি বৃদ্ধির দর-কষাকষি চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের গমের মানও ভালো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম যে তুলনামূলক বেশি, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দাম একটু বেশি হলেও অন্যদিক দিয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে। তাদের গমে আমিষ কিছুটা বেশি। খুব বেশি, তা নয়, একটু বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে দর-কষাকষি করতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নেই এখানে। লম্বা সময় নিয়ে দর-কষাকষির ক্ষেত্রে সাধারণত এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে, জলদি করতে হবে। লবিস্টদের প্রতি ইঙ্গিত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওরা তো ঢুকতেই পারবে না, ওই অফিসের কাছাকাছি। দর-কষাকষি তো দূরের কথা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যয়ে দুই লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩০২ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।

এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে জি-টু-জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গম কেনার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) মোতাবেক জি-টু-জি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। এ অনুমোদনের পর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়। 
এ ছাড়া দেশে সারের চাহিদা মেটাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া, কানাডা ও মরক্কো থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৯২ কোটি ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বৈঠক সূত্র জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন (প্রডিংটরক) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৩০ টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব নিয়ে আসে কৃষি মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা অনুমোদন দিয়েছে। এই সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৩৫১ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ৭ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৯১ টাকা ৮৮ পয়সা কেজি দরে এই মসুর ডাল কিনতে মোট ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মসুর ডাল কেনার পাশাপাশি সিঙ্গাপুর থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৫২২ কোটি ২৭ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৯ টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ধরা হচ্ছে ১২ দশমিক ৪৩ মার্কিন ডলার।

প্যানেল হু

×