ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

আপনার স্মার্টনেস কমে যাচ্ছে ১টি সাধারণ ভুলে—এখনই জেনে নিন!

প্রকাশিত: ০১:১০, ২৪ জুলাই ২০২৫

আপনার স্মার্টনেস কমে যাচ্ছে ১টি সাধারণ ভুলে—এখনই জেনে নিন!

ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক যুগে স্মার্টনেস শুধু বাহ্যিক চেহারায় নয়, বরং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান এবং কার্যকর যোগাযোগের ক্ষমতার ওপরও নির্ভর করে। অথচ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত সাধারণ ভুল অজান্তেই আমাদের এই 'স্মার্টনেস' কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই ভুলটি প্রায় সবাই করে এবং এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সেই ভুলটি হলো – পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা ঘুমের অনিয়ম।

আমরা প্রায়শই কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন বা সামাজিক জীবনকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে ঘুমকে অবহেলা করি। রাত জেগে কাজ করা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম বা অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচী – এ সবই আমাদের মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের স্মার্টনেস এবং কর্মদক্ষতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

কেন পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া স্মার্টনেস কমায়?
১. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস: ঘুম মস্তিষ্কের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় মেরামত এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। যখন আমরা ঘুমাই, তখন মস্তিষ্ক দিনের বেলার তথ্য প্রক্রিয়া করে, স্মৃতিকে সুসংহত করে এবং বর্জ্য পদার্থ দূর করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের এই প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হয়, ফলে পরের দিন মনোযোগ ধরে রাখা, নতুন কিছু শেখা বা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।

২. স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা: ঘুমের সময় মস্তিষ্ক স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতিতে রূপান্তরিত করে। ঘুমের অভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে নতুন তথ্য মনে রাখা বা পুরনো তথ্য মনে করতে সমস্যা হয়। এটি আমাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতা এবং স্মার্টনেসের একটি বড় অংশ।

৩. মনোযোগ ও একাগ্রতার অভাব: ঘুমের অভাব মানুষকে অস্থির এবং অমনোযোগী করে তোলে। কোনো কাজে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যা কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশোনায় দক্ষতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে সমাধানের ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।

৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা: পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া মস্তিষ্ক দ্রুত ও কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ঘুমের অভাবে মানুষ প্রায়শই ভুল বা তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাদের স্মার্টনেসের পরিচায়ক নয়।

৫. মেজাজ ও আবেগের ভারসাম্যহীনতা: ঘুমের অভাব মেজাজের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ খিটখিটে, বিষণ্ণ বা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। এটি সামাজিক পরিস্থিতিতে কার্যকর যোগাযোগ এবং আন্তঃব্যক্তিক স্মার্টনেসকে বাধাগ্রস্ত করে।

৬. শারীরিক ক্লান্তি ও অলসতা: মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরও পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া ক্লান্তি অনুভব করে। শারীরিক ক্লান্তি মানুষকে অলস করে তোলে এবং যেকোনো কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, যা সামগ্রিকভাবে কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়।

আপনার স্মার্টনেস বাড়াতে করণীয়:
ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন: প্রতিদিন রাতে অন্তত ৭-৯ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের চেষ্টা করুন।

নির্দিষ্ট ঘুমের সময়সূচী: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন, এমনকি ছুটির দিনেও। এটি আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়িকে ঠিক রাখবে।

ঘুমের পরিবেশ: ঘুমানোর ঘর অন্ধকার, শান্ত এবং ঠাণ্ডা রাখুন। শোবার আগে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিন দেখা থেকে বিরত থাকুন।

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার: সন্ধ্যায় ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

নিয়মিত ব্যায়াম: দিনের বেলা নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ঘুমের মান উন্নত করে, তবে শোবার ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।

ঘুমকে অবহেলা করা মানে আপনার মস্তিষ্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেরামত প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে দেওয়া। এই সাধারণ ভুলটি শুধরে নিলেই আপনি আপনার স্মার্টনেস এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।

ফারুক

×