
ছবি: সংগৃহীত
সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর শরীরের জন্য অপরিহার্য হলো একটি শান্তিময় ঘুম। কিন্তু আধুনিক জীবনের স্ট্রেস, উদ্বেগ ও কর্মব্যস্ততার চাপে অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো 'কর্টিসল', যা একটি 'স্ট্রেস হরমোন'। এই হরমোনের মাত্রা শরীরে অতিরিক্ত বেড়ে গেলেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তবে খাদ্যতালিকায় কিছু পরিবর্তন এনে কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব, যা গভীর ও স্বস্তিদায়ক ঘুম নিশ্চিত করতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু খাবার রয়েছে যা রাতে ডিনারের প্লেটে রাখলে কর্টিসলের মাত্রা কমে এবং ফলস্বরূপ ঘুম হয় আরো গভীর ও স্বস্তিদায়ক। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সেই খাবারগুলো কী কী:
১. ওটস
অনেকে সকালের নাশতায় ওটস খেলেও, রাতেও এটি হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। ওটসে প্রচুর পরিমাণে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা সেরোটোনিন নিঃসরণে সাহায্য করে। সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়লে কর্টিসলের প্রভাব কমে আসে এবং শরীর ধীরে ধীরে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ঘুমের আগে এক বাটি হালকা গরম ওটসে বাদাম, মৌরি গুঁড়া বা সামান্য দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেলে মন ও শরীর দুই-ই শান্ত হয়।
২. টক দই
টক দই বা গ্রিক ইয়োগার্টে থাকে প্রচুর প্রো-বায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, যা পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য ও মানসিক চাপের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। প্রো-বায়োটিক উপাদান কর্টিসল হ্রাসে সাহায্য করে, ফলে ঘুম হয় শান্তিময়। রাতের খাবার খাওয়ার পর এক বাটি টক দই খেতে পারেন, চাইলে তার সঙ্গে সামান্য মধু বা চিয়া সিডসও মেশাতে পারেন।
৩. বাদাম ও বীজ
আমন্ড, আখরোট, সূর্যমুখী বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিডের মতো বাদাম ও বীজে থাকে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম। এই মৌলটি কর্টিসলের মাত্রা কমাতে কার্যকর। ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুর উত্তেজনা কমিয়ে দেয় এবং স্নায়ুকে শান্ত করতে সাহায্য করে। রাতের খাবারে সালাদ বা খিচুড়ির ওপর কিছু বাদাম ছড়িয়ে দিলে যেমন স্বাদ বাড়ে, তেমনই বাড়ে স্বাস্থ্যগুণও।
৪. কলাইয়ের ডাল বা মুগ ডাল
কলাইয়ের ডাল বা মুগ ডালের মধ্যে থাকে ট্রিপ্টোফ্যান নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই ডাল ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রোটিনে ভরপুর হওয়ায় রাত্রিকালীন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ইনসুলিন ব্যালান্স করে। এর ফলে কর্টিসলের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে। রাতে খাবার খাওয়ার সময় এক বাটি হালকা ঘন ডাল খাওয়া কর্টিসল নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ উপায়।
৫. ক্যামোমাইল চা
অনেকে ভাবেন চা খেলে ঘুম চলে যায়, কিন্তু ডিনারের পর ক্যামোমাইল চা শরীরকে হালকা করে দেয়। এই চায়ে থাকে অ্যাপিজেনিন নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা কর্টিসলের উৎপাদন কমায় ও স্নায়ুকে শিথিল করে। রাতের খাবারের আধ ঘণ্টা পর এক কাপ গরম ক্যামোমাইল চা পান করতে পারেন। বিশেষ করে যারা চায়ে দুধ বা চিনি খান না, তাদের জন্য এটি আদর্শ রিল্যাক্সেশন ড্রিঙ্ক।
ঘুম ভালো করার জন্য ওষুধ না খেয়েও খাদ্যতালিকায় ছোট পরিবর্তন এনে কর্টিসলের বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব। তবে রাতের খাবার কখন খাওয়া হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলাই উত্তম। পাশাপাশি, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় রাতের ডিনার থেকে বাদ দেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, ঘুম মানে শুধু বিশ্রাম নয়, ঘুম সুস্থ থাকার অন্যতম চাবিকাঠি। তাই ভালো ঘুমের জন্য ভালো খাবারও খাওয়া উচিত।
সাব্বির