
ছবিঃ সংগৃহীত
সময় পাল্টেছে, বদলেছে মানুষও। প্রযুক্তি, রাজনীতি, যুদ্ধ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার গতিপথ বদলে দিয়েছে মানুষের চিন্তাভাবনা ও মূল্যবোধ। তাই সময় অনুযায়ী প্রজন্ম ভাগ হয়েছে একাধিক ধাপে। প্রতিটি প্রজন্মই তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, বিশ্বাস ও জীবনদর্শনের মাধ্যমে ইতিহাসকে রচনা করেছে।
চলুন জেনে নিই কোন প্রজন্ম কবে জন্মেছে, তাদের বৈশিষ্ট্য কেমন এবং আপনি কোন প্রজন্মের অংশ!
দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (১৯০১–১৯২৭)
এই প্রজন্মের মানুষরা ছিলেন মহামন্দা (Great Depression) ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ এবং স্থিতিশীলতা ছিল তাদের মূল পরিচয়। মার্কিন লেখক টম ব্রোকাও এই প্রজন্মকে বলেছেন "যেকোনো সমাজের শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম"।
দ্য সাইলেন্ট জেনারেশন (১৯২৮–১৯৪৫)
যুদ্ধের সময় এরা ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুণ। কিন্তু যুদ্ধোত্তর সময় তাদের জীবন গঠন করেছে। নিয়ম-শৃঙ্খলা, কঠোর পরিশ্রম ও নম্রতাই ছিল তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
বেবি বুমারস (১৯৪৬–১৯৬৪)
যুদ্ধোত্তর শান্তি ও উন্নতির সময় জন্ম নেওয়া এই প্রজন্ম গড়ে তুলেছে নাগরিক অধিকার, নারীবাদ ও পরিবেশবাদী আন্দোলন। এরা কর্মঠ, আশাবাদী এবং গণমাধ্যম ও রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।
জেনারেশন এক্স (১৯৬৫–১৯৮০)
এরা পরিচিত ‘ল্যাচকি কিডস’ নামে। প্রযুক্তি বিপ্লবের ঠিক আগমুহূর্তে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম স্বাধীনতা, বাস্তবতা এবং নমনীয় জীবনের পক্ষে। এনালগ ও ডিজিটালের মধ্যবর্তী সেতুবন্ধ হিসেবে আজকের প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
মিলেনিয়ালস (১৯৮১–১৯৯৬)
ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্মার্টফোনের প্রারম্ভিক যুগে বড় হয়ে ওঠা মিলেনিয়ালরা ভোগের চেয়ে অভিজ্ঞতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা আবেগ, মূল্যবোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। কর্মপদ্ধতি, কেনাকাটা এবং সন্তান পালনেও তাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
জেনারেশন জি (১৯৯৭–২০১২)
জন্ম থেকেই প্রযুক্তিবান্ধব, তাই এদের বলা হয় ডিজিটাল নেটিভস। মানসিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সচেতন এই প্রজন্ম স্বাধীনচেতা, উদ্ভাবনী এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত।
জেনারেশন আলফা (২০১৩–২০২৪)
এই প্রজন্মের শিশুরা বেড়ে উঠছে এআই, স্মার্ট টয় ও ভার্চুয়াল শিক্ষা পরিবেশে। এদের জীবন পুরোপুরি প্রযুক্তিকেন্দ্রিক। ধারণা করা হচ্ছে, এরা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে শিক্ষিত ও সংযুক্ত প্রজন্ম।
জেনারেশন বিটা (২০২৫–২০৩৯)
এদের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত হলেও প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জে বড় হয়ে এরা গড়ে উঠবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে।
জেনিয়ালস (১৯৭৭–১৯৮৩)
জেনারেশন এক্স ও মিলেনিয়ালের মাঝে জন্ম নেয়া এই প্রজন্ম স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার আগমুহূর্তে বেড়ে ওঠে, আবার প্রযুক্তির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেয়। এদের আছে বাস্তববোধের সাথে আশাবাদের মিশ্রণ।
জিলেনিয়ালস (মাঝ-১৯৯০ থেকে শুরুর ২০০০)
মিলেনিয়াল ও জেন জি’র মধ্যবর্তী প্রজন্ম, যারা ইন্টারনেট যুগের সূচনা দেখেছে আবার স্মার্টফোনে অভ্যস্তও। এরা পরিবর্তনের প্রতি অনুরাগী, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আবেগতাড়িতভাবে সচেতন।
আপনি কোন প্রজন্মে পড়েন?
এখন নিজ জন্মসালটি মিলিয়ে দেখে নিন, আপনি কোন প্রজন্মের প্রতিনিধি! আপনার চিন্তাভাবনা, অভ্যাস ও মূল্যবোধ কোন সময়ের হাত ধরে গড়ে উঠেছে, তা জানলে আপনি নিজেকেই হয়তো আরও ভালোভাবে চিনতে পারবেন।
ইমরান