ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘুমেও বিপদ: নিয়মিত কত ঘণ্টার বেশি ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর, জানাল গবেষণা

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৭:০৫, ২৫ জুলাই ২০২৫

ঘুমেও বিপদ: নিয়মিত কত ঘণ্টার বেশি ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর, জানাল গবেষণা

ছবি: প্রতীকী

আমরা সবাই জানি কম ঘুমে হৃদরোগ, বিষণ্নতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দুর্বলতা হয়। তবে কি বেশি ঘুমও ততটা ক্ষতিকর হতে পারে? নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রাতের বেলা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং এর সঙ্গে নানা রোগ যেমন ডায়াবেটিস ও ডিপ্রেশনের সম্পর্ক থাকতে পারে।

ঘুমের গুরুত্ব: ডায়েট ও ব্যায়ামের সমতুল্য

শরীরের সুস্থতার জন্য ভালো পুষ্টি ও নিয়মিত ব্যায়ামের মতোই ঘুমও অপরিহার্য। ঘুমের সময় শরীর টিস্যু ও পেশী মেরামত করে, স্মৃতি সংরক্ষণ করে, হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পরিপূর্ণ ঘুম আমাদের মানসিক ও শারীরিক কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেয়। নিয়মিত ৭ ঘণ্টার কম ঘুম হলে ক্লান্তি, মন খারাপ ও মনোযোগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে কম ঘুম হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা ও আগাম মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

নিয়মিত ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে কী হয়?

৭৯টি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, যারা রাতে ৭ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ১৪% বেশি, কিন্তু যারা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের ঝুঁকি ৩৪% পর্যন্ত বেড়ে যায়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। এর পাশাপাশি বেশি ঘুম ডিপ্রেশন, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ওজন বৃদ্ধি ও মেটাবলিক সমস্যা যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সঙ্গেও সম্পর্কিত।

অতিরিক্ত ঘুম কি রোগের কারণ নাকি লক্ষণ?

গবেষণা বলছে, ঘুমের পরিমাণ ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক থাকলেও অতিরিক্ত ঘুম নিজে থেকে রোগের কারণ নয়; বরং এটি অনেক সময় রোগের লক্ষণ। দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতাগ্রস্ত বা ক্লান্তি অনুভবকারী ব্যক্তিরা বেশি ঘুমাতে পারে কারণ শরীরকে বেশি বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ফাইব্রোমায়ালজিয়ার মতো সমস্যার কারণে ঘুমের গুণগত মান কমে গেলে ঘুমের সময় বেড়ে যেতে পারে। জীবনযাত্রার অবস্থা, ধূমপান, অলসতা, ও ওজন বৃদ্ধিও অতিরিক্ত ঘুমের সাথে জড়িত হতে পারে।

আপনার জন্য কতটা ঘুম প্রয়োজন?

ঘুমের প্রয়োজন বয়স ও ব্যক্তিগত পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে:

  • কিশোরদের প্রয়োজন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা
  • প্রাপ্তবয়স্কদের ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা
  • বয়স্কদের শারীরিক ঘুমের প্রয়োজন কমে যায় না, তবে বিছানায় কাটানো সময় বাড়তে পারে

শুধুমাত্র ঘুমের সময় নয়, ঘুমের গুণগত মানও জরুরি। রাতভর ঘুমে ঘন ঘন জাগা বা ইনসমনিয়া থাকলে ঘুম বাড়লেও তা বিশ্রামদায়ক নাও হতে পারে।

সুস্থ ঘুমের জন্য কিছু টিপস

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও ওঠার চেষ্টা করুন, ছুটির দিনেও
  • সকালবেলায় সূর্যের আলো নিন এবং দিনে শারীরিক কার্যক্রম বাড়ান
  • বিছানায় যাওয়ার আগে এক ঘণ্টা ডিজিটাল স্ক্রিন ও মোবাইল থেকে দূরে থাকুন
  • ঘুমের পরিবেশ শীতল, অন্ধকার ও শান্ত রাখুন
  • শিথিল হওয়ার জন্য পড়াশোনা, মেডিটেশন বা হালকা সংগীত শুনতে পারেন

নিয়মিত ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুম হলে বা দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পরও ক্লান্তি অনুভব করলে সেটা কোনো গভীর স্বাস্থ্যগত সমস্যার সংকেত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কম ঘুমের মতই বেশি ঘুমও শরীরের জন্য সতর্কতার সংকেত। সুতরাং স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার মানসম্মত ঘুম নিন, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখুন। ঘুম নিয়ে উদ্বেগ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×