
সম্প্রতি জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দালালদের খপ্পরে পড়ে মাদারীপুর থেকে লিবিয়া হয়ে ইতালির পথে যাত্রা করে ৫ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ১৪ যুবক। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়েন তারা। তার পর থেকে তাদের সঠিক সন্ধান মিলছে না। স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার আগে প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা অসহায় পরিবারগুলোর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার কয়েকটি ভিডিওও রয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথম ১৫-২০ লাখ টাকা করে নেয়। পরে লিবিয়ায় বন্দি করে আদায় করে আরও ৩০-৪০ লাখ টাকা। ভিটে মাটি বিক্রি করে ও চড়া সুদের বিনিময়ে মুক্তিপণের লাখ লাখ টাকা ঋণ করে দালালদের হাতে তুলে দিলেও এখন পর্যন্ত অভিভাবকরা আদরের সন্তানদের সুনির্দিষ্ট খোঁজ পাচ্ছেন না। ফলে নিখোঁজদের প্রতিটি ঘরে চলছে মাতম। স্বজনদের কান্নার সঙ্গে যেন পরিবারগুলোর স্বপ্নও এখন চোখের জলে ভাসছে।
নিরাপদ জীবনযাপন ও আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের আশায় জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এ দেশের বহু মানুষ। দেশে কর্মসংস্থানের অভাব ও দরিদ্রতাও এর অন্যতম প্রধান কারণ। এই যাত্রায় বৈধ এবং অবৈধ দুই উপায়েই মানুষকে যেতে দেখা যায়। এর মধ্যে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পথে ঝুঁকিতে পড়ছে অনেকের জীবন। মানব পাচারের শিকার হওয়ার পর দেশে ফেরত এসেছেন এমন ব্যক্তিদের বর্ণনায় পাওয়া যাচ্ছে তাদের ওপর পাচারকারীদের অমানুষিক নির্যাতনের কথা। সচরাচর ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল, সাইপ্রাস, স্পেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, ওমান, কাতার, ইরাক ও লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের বেশি পাচার করা হয়। এক্ষেত্রে জড়িত দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিদেশে লোক পাঠানোর বৈধ লাইসেন্সও থাকে না। প্রশাসনের নজরদারি ও স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাবে দালালরা বিদেশে পাঠানোর নাম করে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। তাদের অন্যতম শিকার হন বেকার যুব সমাজ। মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে প্রতারকচক্রের খপ্পরে পড়ে ভাগ্যক্রমে দুই-একজন কাক্সিক্ষত দেশে যেতে পারলেও বেশির ভাগই নিখোঁজ বা নৌকাডুবিতে সাগরে সলিল সমাধি হয়। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দালাল ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে, এর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। এমনটি থামানো না গেলে আগামীতে হয়তো আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের বিদেশগামী তরুণ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করা চাই। প্রবাসের রেমিটেন্স যোদ্ধারা আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাদের জীবনের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব।
প্যানেল/মো.