ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

কুয়েটে সেশনজট

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ২৩ জুলাই ২০২৫

কুয়েটে সেশনজট

সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, আমরা জানি, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার মহান কারিগর। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ছাত্রছাত্রীদের পদভারে মুখর প্রাণ-প্রকৃতি। শ্রেণিকক্ষের আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমালোচনার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করা এবং জাতির কাছে তা ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি নিয়ে সংঘর্ষের পাঁচ মাস পরও অচলাবস্থা কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। এক সময়ে বাংলাদেশের কতিপয় নোংরা রাজনীতিবিদ, দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ছাত্রদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করতো। সময় বদলেছে, প্রযুক্তির কল্যাণে তারা এখন অনেক সচেতন। জুলাই-আগস্টে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে ত্বরিত কিন্তু না, সেই পুরানো দখলদারিত্বের ভূতে আক্রান্ত কতিপয় রাজনৈতিক মানসপট। একটি প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চলবে কি, চলবে না, তা নির্ধারণ করবে সে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অছাত্র কিংবা বহিরাগতরা এতটা দুঃসাহস কী করে দেখায়, ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে ছাত্রদের গায়ে হাত তোলার? শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, রাজনীতিবিদ এবং সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে একাডেমিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে।
চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সাধারণ ছাত্রদের মিছিলে ছাত্রদল বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে হামলা করে, এতে শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ওই রাতেই হামলাকারীদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগে তৎকালীন উপাচার্যসহ কয়েক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষক পিতৃতুল্য, তিনি সবসময় ন্যায়ের পক্ষেই থাকবেন, এমনটিই জাতির আশা। কেন তিনি হামলাকারীদের পক্ষ নিলেন? আবার ছাত্ররা কেন পিতৃতুল্য শিক্ষককে লাঞ্ছিত করবেন? প্রত্যেকেই যার যার সীমা লঙ্ঘন করেছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১ মে মন্ত্রণালয় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনিও ২২ মে পদত্যাগ করেন। অভিভাবকহীন কুয়েট কাম্য নয়, অত্র প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান অনেক শিক্ষক রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে ছাত্রবান্ধব যে কাউকে ভিসার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
প্রায় অর্ধবছরের অচলাবস্থায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী সেশনজট নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
এর মধ্যে গতকালও ক্লাস শুরুর অনুরোধ জানিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা। অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের অনুরোধ জানিয়ে গত রবিবার সকালে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা না আসায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা হতাশা নিয়ে যে যার অবস্থানে ফিরে যান। কিন্তু তাতেও মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের মন গলেনি, কেন তাদের এত অভিমান? তাদের কি কোনোই দায় নেই? তারা কি মনে করেন, তারা সব জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। যদি এমনটি হয়, তবে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন কোনো শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
রাষ্ট্রের কোনো অর্গানকে কেউ যেন জিম্মি করতে না পারে। শিক্ষকদের ভুলে গেলে চলবে না, সরকার এনবিআরে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। ছাত্রদেরও পিতৃতুল্য শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। ছাত্র-শিক্ষকদের অনিন্দ্য সম্পর্কই পারে একটি সুন্দর ক্যাম্পাসে আলোকিত প্রজন্ম উপহার দিতে।

প্যানেল/মো.

×