ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

রেলপথে অপচয়

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:২৮, ৮ জুলাই ২০২৫

রেলপথে অপচয়

বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেলপথ খুবই জনপ্রিয় ও স্বস্তিদায়ক। দেশের বড় একটি অংশজুড়ে আছে রেলপথের অস্তিত্ব। সড়ক পথে দুর্ঘটনার আধিক্যের ফলে জনগণের ভরসা রেলপথে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের বিগত রাজনৈতিক সরকারগুলো রেলপথের বিস্তার ঘটিয়েছে বিস্তর, যার অধিকাংশই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।
ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা সমীক্ষা ছাড়াই, দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যত্রতত্র রেলপথ ও স্টেশন চালু করা হয়েছে। লাভ-লোকসানের হিসাব না কসে, রেলপথের কথিত এ উন্নয়নের পূর্ণতা পেয়েছে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনকালে। তারা ৬৬টি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে। মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালু করে ৯২টি। জনপ্রিয় প্রায় ৯৮টি মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী আমলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা বলে, মন্ত্রী-এমপিদের চাপে নতুন নতুন ট্রেন চালু ও গন্তব্যস্থল সম্প্রসারণ, নতুন স্টেশনে ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ, যার অনেকটাই ছিল বাস্তবতা বিবর্জিত। কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজনৈতিক চাপে যেসব রেলপথ চালু করা হয়েছে, তার অন্তত পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেনে পর্যাপ্ত যাত্রী হচ্ছে না। স্থানীয় জনগণও চাচ্ছে না ট্রেনগুলো বন্ধ হোক। এমনকি ট্রেন বন্ধের উদ্যোগ নিলে বাধা আসে। ফলে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। প্রতি বছর রেলওয়ে গড়ে আড়াই হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনছে, যা ৬৯০ কোটি টাকা ছিল ২০০৯-১০ অর্থবছরে।  গত বছর ৮ আগস্ট, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কম আয় করা ট্রেন রুট বন্ধ এবং যাত্রী চাহিদা বেশি রয়েছে- এমন পথে ট্রেন বাড়ানোর লক্ষ্যে, রেলের রুট রেশনালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে অলাভজনক ও অপ্রয়োজনীয় রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। রেলওয়ে সূত্রমতে, জ্বালানি খরচ, লোকবল ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় শতভাগ যাত্রী পরিবহন করার পরও আন্তঃনগর ট্রেনে লোকসান হয়, রয়েছে চুরির বিড়ম্বনা। এছাড়া আছে ইঞ্জিন-কোচের সংকট। উল্লেখ্য, ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল ভারতবর্ষে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর আমাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ড রেলযুগে প্রবেশ করে।
আমরা মনে করি, রেলপথ বন্ধের আগে সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের প্রান্তিক মানুষ ও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের প্রিয় ও সহজলভ্য বাহন হলো ট্রেন। মাল ও শস্য পরিবহনেও জুড়ি নেই রেলের। দেশের রেলপথকে জনবান্ধব করতে সরকার রেল মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। যেখানে মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে কর্মকর্তা, রেল বিশেষজ্ঞ ও ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন। গত ছয় মাসে একাধিক বৈঠক হয়েছে কিন্তু এখনো তারা কোনো সুপারিশ দিতে পারেনি।

প্যানেল/মো.

×