ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

পাহাড়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ২০:০১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

পাহাড়ে শিক্ষা ও প্রযুক্তি

দেশের পার্বত্য অঞ্চল শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় অগ্রসর হয়নি, এটি বাস্তবতা। অথচ দেশের সার্বিক উন্নতির সঙ্গে পাহাড়ের জনসাধারণের জীবনমান ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত থাকার কথা ছিল।  বুধবার পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির কোনো বিকল্প নেই। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদে পরিপূর্ণ পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এলাকা। কিন্তু এটি দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। এখানকার ফল-ফলাদি এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। তবে দুর্গমতার কারণে এসব এলাকা পিছিয়ে রয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ দূরত্ব ও সীমাবদ্ধতা জয় করতে হবে।
টেলিযোগাযোগ সুবিধাবঞ্চিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান, সব ইউনিয়নের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, গ্রোথ সেন্টার, টেলিকম অপারেটর প্রভৃতি স্থানে নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রদান করাসহ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বিগত সরকারের পক্ষ থেকে সক্রিয় উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের এ দিকটিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে। যোগাযোগ তথা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের যোগাযোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেপ্টেম্বরে এক আলোচনা সভায় মোবাইল সক্ষমতার বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠভাবে উঠে এসেছিল। আলোচনায় খোলাখুলিভাবে উঠে আসে যে, দেশে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির গ্রাহকের বিপরীতে টাওয়ারের সংখ্যা কম থাকার কারণে নেটওয়ার্কের জটিলতা, ধীরগতি এবং কলড্রপের পরিমাণ বাড়ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখনো ৬০ শতাংশ টাওয়ার নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে। টাওয়ার স্বল্পতা নিরসনে মোবাইল অপারেটর, টাওয়ারকো এবং ভেন্ডরদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, বর্তমানে নেটওয়ার্কের ধীরগতি, কলড্রপ, কলমিউটসহ মোবাইল নেটওয়ার্কের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ হচ্ছে টাওয়ার স্বল্পতা।
আসা যাক শিক্ষা প্রসঙ্গে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক শিক্ষার সূচনা মূলত মোগল আমল পরবর্তী ব্রিটিশ শাসনামলে এবং তাও ছিল প্রধানত সমাজের উঁচু শ্রেণি বিত্তবান, সম্পদশালী রাজপরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এসব শিক্ষা সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং এ আধুনিক শিক্ষা সমাজ কাঠামো বিনির্মাণে সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের উত্তরণ ঘটিয়েছিল। সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েদের পক্ষে এসব শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ মোটেই ছিল না বলা যায়। মূলত ভাষাগত পার্থক্য, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার তারতম্য ও ভিন্ন ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ তাদের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম মাত্রই এক একটা আধুনিক শিক্ষা বঞ্চিত জনপদ। যদিও ব্যতিক্রম রয়েছে। বহু পাহাড়ি রাজধানীতে এসে উচ্চশিক্ষাসম্পন্ন করে দেশ-বিদেশে কর্মক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থার চ্যালেঞ্জের বিষয়টিও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে এসেছে। তিনি সত্যোচ্চারণ করে বলেন যে, সারাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংকটে আছে, তবে পার্বত্য অঞ্চলে এই সংকট আরও বেশি প্রকট। দুর্গম অঞ্চলে থাকা মানেই পিছিয়ে থাকা নয়। লেখাপড়ায় সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শিক্ষার উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এটা ঠিক, পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক খাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে তাদের বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার উদ্যোগ এখন থেকেই নেওয়া হবে, এমন আশাবাদ পাহাড়ের সর্বস্তরের মানুষের।

মোহাম্মদ আলী

×