ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগে পাহাড়ি জনপদের কয়েক হাজার মানুষ

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০০:৩৫, ৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:৪৭, ৫ জুলাই ২০২৫

সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগে পাহাড়ি জনপদের কয়েক হাজার মানুষ

দৈনিক জনকণ্ঠ

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমূল ইউনিয়নের বালীজুড়ি এলাকায় সোমেশ্বরী নদীর উপর সেতু না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বালীজুড়ি, রাংগাজান, খাড়ামোড়া, তাওকুচা, আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

বছরের পর বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ নৌকা ও বাঁশের সাঁকোর মাধ্যমে পারাপার হচ্ছেন। বর্ষা মৌসুমে এই দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিসহ দৈনন্দিন কাজকর্মে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষ করে স্কুল,কলেজগামী শিক্ষার্থীদের জন্য এই নদী পারাপার যেন এক চরম ঝুঁকির নামান্তর। প্রতিদিনই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বই,খাতা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। নদীতে স্রোত বাড়লে কিংবা অতিবৃষ্টিতে সাঁকো ভেঙে গেলে শিক্ষার্থীদের অনেকদিন পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তাদের লেখাপড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এছাড়াও রোগী নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় অনেক সময় মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জরুরি চিকিৎসা পেতে হলে নদী পার হয়ে উপজেলা সদর বা জেলা শহরে যেতে হয়, কিন্তু ব্রিজ না থাকায় রোগীদের জন্য সময়মতো পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

অঞ্চলটিতে পাহাড়ি কৃষির ওপর নির্ভরশীল বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস করেন। কৃষকেরা জমিতে উৎপাদিত শাকসবজি, ধান, ফলমূলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। নদী পারাপারে সময়, শ্রম ও অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় একদিকে যেমন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে বাজারে কৃষিপণ্যের সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটছে।

স্থানীয় বাসিন্দা তারেক জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচনের সময় অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু নির্বাচনের পর সব কিছুই ভুলে যান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নুর হকের দাবি, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কিন্তু নদীটি সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় অনুমোদনের জটিলতায় পড়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এলাকাবাসীর আবেদন, রানীশিমূল ইউনিয়নের বালীজুড়ি অংশে সোমেশ্বরী নদীর ওপর একটি পাকা সেতু দ্রুত নির্মাণ করা হোক। এতে শিক্ষার্থী, কৃষক, রোগীসহ সাধারণ মানুষের চলাচল সহজ হবে, কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে গতি আসবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সরকারি উদ্যোগে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবনমান বদলে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা সীমান্তবর্তী শ্রীবরদীর ভুক্তভোগী জনগণের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, সোমেশ্বরী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি অফিসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে, এতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

হ্যাপী

আরো পড়ুন  

×