
একটার পর একটা ধাক্কা খাচ্ছে মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জি-২০ সম্মেলন কিংবা সর্বশেষ কোয়াড জোটের সম্মেলন, কোন ফ্রন্টেই সফলতা পাচ্ছে না নয়াদিল্লি। মোদির পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের চিরাচরিত কূটনৈতিক কৌশল এবার ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করছেন অনেক বিশ্লেষক।
বারবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে, গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশ নিয়ে চারপাশে ঘুরে জয়শঙ্কর ফিরছেন শূন্য হাতেই। রয়টার্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইন্দো-প্যাসিফিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোট পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো নিন্দা বার্তা দিতে পারেনি। অথচ এই জোটের অন্যতম সদস্য ভারত। অবাক করা মত বিষয় হচ্ছে পাকিস্তান এই জোটের সদস্যই না। তবুও কৌশলগত বাস্তবতায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমাদের অবস্থানের পুনর্বিন্যাসের কারণে ভারত যতটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে, পাকিস্তান ততটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। কাশ্মীরের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা এবং তার প্রেক্ষিতে কোয়াড জোটের প্রতিক্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবৃতি দ্বন্দ্ব এবং পাকিস্তানকে ঘিরে কৌশলগত নিরবতা সব মিলিয়ে মোদির ভারত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মত দিচ্ছেন। এই বছরের ২২ এপ্রিল ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন।
ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত কোয়াড জোট এক যৌথ বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে পাকিস্তানের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি বিবৃতিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিবৃতিতে পাকিস্তানের নাম না থাকা ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর। কারণ এতে ভারতের প্রতি প্রত্যাশিত পশ্চিমা দেশের সমর্থনের ঘাটতি স্পষ্ট হয়েছে।
এপ্রিলের ওই ঘটনার পর ৭ মে ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে তথাকথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ভারতের রাফালসহ চারটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসাত্মক করে। দুদেশের মধ্যে চলে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা। তবে ১০ মে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এই অস্ত্রবিরতির কৃতিত্ব ঘিরে তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বিবৃতির বিভ্রান্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন তার মধ্যস্থতায় এই হামলা বন্ধ হয়েছে। যদিও ভারত সরাসরি অস্বীকার করেছে ট্রাম্পের দাবি কে। এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ও সামরিক সম্পর্ক রক্ষা করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতি তাদের নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা এবং জ্বালানি নির্ভরতা অনেক বেড়েছে। দ্য মস্কো টাইমস এবং রয়টার্সের বরাতে জানা যাচ্ছে ভারত রাশিয়া তৈরি এস ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সুখোই এসইউ ৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান টি ৯০ ট্যাংকের উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা অনেক বৃদ্ধি করেছে।
জ্বালানি খাতেও ভারত এখন রাশিয়ার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। রাশিয়ার তেলের উপর ভারতের নির্ভরতা এখন ৪০ শতাংশেরও বেশি যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই নির্ভরতা অনেকাংশে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভারতের কৌশলগত জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে যারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের কারণ হতে পারে বলে অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মনে করছেন। সামগ্রিকভাবে একদিকে কোয়াড জোটের প্রত্যাশিত সমর্থনের ঘাটতি অন্যদিকে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে রাশিয়ার উপর বাড়তে থাকা নির্ভরতা এই দুই চাপে মোদী সরকারের কূটনৈতিক ভারসাম্য নতুন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সূত্রঃ https://youtu.be/mIxDbs4EbsE?si=fFlwvfTbujOAEada
রিফাত