ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

ভেজালের সাগরে ভাসছি আমরা

শতদল বড়ুয়া

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ভেজালের সাগরে ভাসছি আমরা

প্রতিদিন পত্র-পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে নকল ভেজালের সংবাদ। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নকল ভেজাল প্রতিরোধে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যােছ। কিš কোনো অব¯’াতেই রোধ করা যােছ না। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের জীবনমান অনেক বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে দুই নম্বরী কাজও। নকল ভেজালের কারণে আমরাও কেনো জানি প্রতিকারের চিন্তা করি না। সরকারের পাশাপাশি সাধারণত জনগণও যদি একটু সচেতন হয় তাহলে কোনো না কোনো সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে।

আমরা নকল বা ভেজাল প্রতিরোধে কামিয়াব িছ না সর্ষের মধ্যে থাকায়। নকল ভেজালকারীদের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে হয়তোবা অর্থে লোভের কাছে ধরাশায়ী। জানিনা কারা কোন মতলবে আছে। ¤প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটা জাতীয় দৈনিকে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছেনকল প্রসাধনীতে ঝুঁকিতে স্বা¯’্য এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভি চ্যানেলে প্রসাধনের মনোলোভা বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ দর্শকরা বিজ্ঞাপন দেখে সরলমনে টিভিতে প্রচারিত ব্যান্ডের প্রসাধন ব্যবহার করে।

আসল-নকল চিনার কোনো উপায় নেই। প্রসাধনের মোড়কগুলো চোখ ধাঁধানো রঙিন। অনেকে প্যাকেটের গায়ে বিদেশি বাঘা বাঘা কোম্পানির নাম ব্যবহার করে। কসমেটিকসের দোকানের শো-কেইজে শোভা পায় রং-বেরংয়ের নানা প্রসাধনী। রাস্তার ধারে, ফুটপাতে থরে থরে সাজানো রয়েছে নানা প্রসাধনী। বিক্রেতা স্বরে হাঁকডাকে নিজের নামের কথাও ভুলে যায়। স্টেশন রোডে দাঁড়িয়ে বাসের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। প্রসাধন বিক্রেতার চিৎকারে তার দিকে তাকালাম। পাশে এক পুলিশ দাঁড়িয়ে বিক্রেতার চিৎকারে মুচকি হাসছে। আমি কিছু বলবো খেয়াল করে সম্মান হারানোর ভয়ে আর এগুলাম না।

নকল প্রসাধনের ব্যবসা চলছে উপরি ম্যানেজ করে। মূলতঃ মহিলারা প্রসাধনে আসল ক্রেতা। তারা বিক্রেতার কথায় মুগ্ধ হয়ে নিত্যনতুন প্রসাধন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে বেশি। আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে চর্মরোগ বিভাগের একটা টিকিট নিলাম। চিকিৎসক দেখানোর জন্যে লাইনে দাঁড়ালাম। এবার আমি ঢুকবো। দরজায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি। চিকিৎসক এক মহিলাকে বলছেন, বাজে প্রসাধনী দিয়ে নিজেকে অন্যের কাছে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। রাতে বাসায় এসে মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়েছেন, সকাল বেলায় মুখ টান টান অনুভব করছেন। কোনো চিকিৎসা নিলেন না। মুখ যখন ছোট ছোট বিচি উঠে যন্ত্রণা শুরু হলো তখন ছুটে এলেন আমাদের কাছে। একটু সাবধান এবং সচেতন হোন।

চিকিৎসক যা পরামর্শ দিলেন তা একেবারে সঠিক। নিজে সাবধান এবং সচেতন হলে হবে না, পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সচেতন করে তুলতে হবে। অনলাইনের ভেজাল এবং নকল পণ্য কিনে নিজের অজান্তেই ক্রেতারা বিশেষ করে মহিলারা বেশি প্রতারিত েছ। পরিশেষে ছুটে যােছ চিকিৎসকের কাছে। ব্যবহারকারীর ত্বকে সংক্রমণ এবং ত্বক লাল হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে অনলাইন থেকে কেনা দামি ক্রীমটা ভেজালে ভরা। মহিলাদের আরেক সমস্যা হলো, কম দামের জিনিস কোয়ালিটি হবে না। বেশি দামের প্রসাধন ব্যবহার উপযোগী।

চিকিৎসকদের মতে, সারা পৃথিবীতে কোথাও রং ফর্সাকারী ক্রীম ব্যবহার করে ¯’ায়ীভে রং ফর্সা হওয়ার কোনো নজির নেই। বেনামি প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের পণ্য ব্যবহারের পর অনেক ভালো ফল পাওয়ার দাবি করে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করছে। যা কিছু হোক না কেনো, আরেক সমস্যা আরো জটিল। পণ্য উৎপাদনের তারিখ অতিরিক্ত হয়ে যাওয়া। একেতো ভেজাল তার উপর উৎপাদন তারিখ পেরিয়ে যাওয়া পণ্য ব্যবহারে ত্বকের ক্যান্সার গর্ভজাত সমস্যা হওয়ার আশংকা বেশি। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় ভেজাল এসমস্ত পণ্যে থাকে মার্কারি পারদজাতীয় বিভিন্ন উপাদান। পারদ যেহেতু ভারী ধাতু সেহেতু শরীর থেকে বের হতে পারে না। শরীরে দীর্ঘদিন থাকলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পারদ ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার আশাংকা বাড়িয়ে দেয়। ছাড়া হাইড্রোকুইনন ক্রীম ত্বকের স্বাভাবিক গঠনকে পাল্টিয়ে দেয়। ভেজাল প্রসাধনী চীন থেকে বিশ্বের নামকরা কোম্পানির নকল হলোগ্রাম বিভিন্ন প্রসাধনীর মোড়ক অবৈধ ভাবে দেশে আনা হয়। পরে সেগুলোকে বিশ্বমানের পণ্য হিসেবে চালিয়ে দেয়। 

আজকাল বাজারে যেতে হয় না, বাসা বাড়ির দরজায় এসে প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রয় করে বিক্রেতা। তাদের মনেরমতো ক্রেতা হলো মহিলা। মহিলাদের নানাভাবে পটিয়ে ভেজা প্রসাধনী তথা পণ্য সামগ্রী গছিয়ে দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কয়েকটা পণ্য কিনলে একটা বোনাস পাওয়াও যায়। দেশের বিভিন্ন ¯’ানে ভেজাল নকল প্রসাধনীর নানা লেভেল, টিনের কৌটা তৈরির কারখানা রয়েছে। কারখানা আশেপাশের মানুষেরাও জানতে পারে না তাদের এলাকায় দুই নম্বরী ব্যবসা চালিয়ে যােছ কিছু দুষ্ট শ্রেণির লোকেরা। এসব পণ্যে যদিও বা দেশ বিদেশের ফরমূলা ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্য কিছু দুষ্টচক্র দোকানে পার্লারে বিক্রি করে। পার্লার মালিকরাও জানেন না এপণ্য আসল না নকল।

দেশের নামীদামী মার্কেট ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের অসংখ্য পেজে বিভিন্ন নামকরা কোম্পানির নাম নকল করে প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের চামড়া পাতলা হয়ে যায়, ত্বকে লোমের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হয়, লোমের গোড়ায় ফোঁড়াসহ ত্বকে ভাজ পড়ে যায়। এতে গর্ভবতী নারীর ভ্রূণটির স্নায়ুবিকাশে বাধাগ্রস্ত হয়।

অনলাইন থেকে যেসব মহিলারা প্রসাধনী সামগ্রী কিনছে তারা সর্তক না হলে বড়ধরনের ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানীর সীলগালা, লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট মহিলারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত েছ। আমাদের সমস্যা হলো-প্রসাধনী পণ্য সামগ্রী কিনে কোনো মহিলা একবার ঠকলে নিজে হজম করে, কাউকে কিছু বলে না। এতেই ঘটে বড় ধরনের বিপত্তি। একজন অন্য জনের সাথে উল্লিখিত বিষয়ে শেয়ার করলে সকলের জন্যে মঙ্গল। তাই আসুন অনলাইন প্রসাধনী সামগ্রী বর্জন করে যাচাই বাচাই করে প্রসাধনী সামগ্রী কিনি, নিজের স্বা¯’্যকে ভালো সু¯’ রাখি।

 

লেখক : সাংবাদিক

×