ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা গেট

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৬ জানুয়ারি ২০২৪

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা গেট

.

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা গেটের ফিরে আসা নিঃসন্দেহে কর্তৃপক্ষের ইতিহাস-সচেতনতার দৃষ্টান্ত। সংস্কারের পর মোগল ইতিহাসের উজ্জ্বল স্মৃতি ঢাকা গেটের বর্ণিল উদ্বোধন হলো বুধবার। বিবি মরিয়ম কামান পুনঃস্থাপন এবং দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থাসহ নান্দনিক চত্বর গড়ে তোলায় ইতিহাসপ্রেমীরা এখানে এসে আনন্দ পাবেন। সেইসঙ্গে প্রাচীন গৌরব সম্বন্ধেও তাদের কৌতূহল বাড়বে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের ধারাবাহিকতায় ঢাকা গেট পুনঃস্থাপন নিঃসন্দেহে নাগরিকদের সাধুবাদ পাবে।

ঢাকায় অবস্থিত প্রাচীন স্থাপনাগুলোর খুব কম সংখ্যকই এখন পর্যন্ত টিকে আছে। কেননা, আধুনিকতার ছাপে রাঙিয়ে তুলতে স্থাপনাগুলো পড়ছে ধ্বংসের মুখে। এমনই একটি স্থাপনা মীর জুমলার গেট। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনা। এই গেটটি ঢাকা গেট, রমনা গেট বা ময়মনসিংহ গেট নামেও পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কার্জন হল ছাড়িয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমি যেতে চোখে পড়ে হলুদ রঙের মীর জুমলার এই তোরণটি। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার সুবাদার ছিলেন মীর জুমলা। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত ঢাকা কোষ- বলা হয়েছে, মীর জুমলা ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সালের মধ্যে ঢাকার সীমানা চিহ্নিত করতে এবং স্থলপথে শত্রুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। ঢাকার রমনায় তিন নেতার মাজার সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে, বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউর প্রবেশমুখে দোয়েল চত্বরের কাছে, যে ফটকটি দেখা যায়, সেটাই মীর জুমলার ফটক হিসেবে পরিচিত। রাস্তার দুই ধারে গেটের দুই প্রান্তে কতক গোলাকার উঁচু স্তম্ভ বহির্পার্শ্বের দিকে ক্রমশ ঢালু পাকা রেলিং দ্বারা সংযুক্ত।

মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিলমীর জুমলার গেট পরে কখনো      ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনোঢাকা গেটএবং অনেক পরে নামকরণ করা হয়রমনা গেট গেট রমনায় প্রবেশ করার জন্য ব্যবহার করা হতো বলে পরে সাধারণ মানুষের কাছে এটি রমনা গেট নামেই পরিচিতি পায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুসারে তোরণ এবং আশপাশের জায়গার নাম দেওয়া হয়েছেমীর জুমলার গেট

১৯১৭ সালের একটি ছবিতে রমনা গেটটিকে দুপাশে আরও প্রলম্বিত অবস্থায় দেখা যায়। ঢাকা নগরীকে উত্তর দিক থেকে মগদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এই প্রবেশদ্বারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। অপর এক তথ্যে বলা হয়েছে, ইসলাম খাঁর আমলে রমনা অঞ্চলে ছিল বাগে বাদশাহী নামে মোগল উদ্যান।

বাগে বাদশাহীর প্রবেশপথে ছিল দুটি স্তম্ভ। পরে তা পুনর্র্নির্মাণ করে নামকরণ করা হয় ময়মনসিংহ গেট। তবে প্রচলিত এসব ধারণার সঙ্গে ইতিহাসবিদদের বেশ দ্বিমত রয়েছে।ঢাকাগ্রন্থের লেখক আহমদ হাসান দানী বর্তমানে অবশিষ্ট স্তম্ভ দুটি পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, মোগল আমলে বর্তমান গেটটি তৈরি হয়নি। তাছাড়া স্তম্ভ দুটোর গড়ন ইউরোপীয় রীতির। মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্সকে যুক্ত করার জন্য রেসকোর্সের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি রাস্তা  তৈরি করেন তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়স। রাস্তার প্রবেশমুখে তিনি দুটি স্তম্ভ তৈরি করেন। বর্তমান নজরুল এভিনিউয়ের রাস্তাও প্রথমে ডয় তৈরি করেন। ১৮২০ থেকে ১৮২৫ সালের মধ্যে গেট নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা। সে যাই হোক, ঢাকা মহানগরীতে নতুনরূপে ঢাকা গেটের ফিরে আসা ঢাকাবাসীর জন্য একটি চমৎকার প্রাপ্তি।

×