
ছবি: সংগৃহীত
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপের প্রায় ৪০% অভ্যাসনির্ভর-এমন স্বয়ংক্রিয় আচরণ যা আমাদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। আমরা প্রায়ই ভাবি বড় পরিবর্তন মানেই বড়সড় সিদ্ধান্ত, কিন্তু বাস্তবে ছোট ছোট অভ্যাসই সময়ের সাথে সবচেয়ে বড় রূপান্তর ঘটাতে পারে। এগুলো শুধুই দৈনন্দিন কাজ নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি যা নির্বিচারে অনুসরণ করলে আপনার জীবন সম্পূর্ণভাবে বদলে যেতে পারে।
অভ্যাস গঠনের বিজ্ঞান:
অভ্যাস হচ্ছে এমন কাজ যা নির্দিষ্ট সংকেতের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুরু হয় এবং একটি পুরস্কার দেয়। এই অভ্যাসচক্র বোঝার মাধ্যমে আমরা খারাপ অভ্যাস বাদ দিয়ে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। প্রতিবার কোনো আচরণ পুনরাবৃত্তি করলে মস্তিষ্কে একটি নিউরাল পথ তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে স্বয়ংক্রিয় আচরণে রূপান্তরিত হয়। ফলে একটানা ছোট ছোট পদক্ষেপ বড় পরিবর্তনের ভিত্তি গড়ে তোলে।
জীবন বদলে দিতে পারে এমন ১০টি অভ্যাস
১. দৈনিক মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন:
প্রতিদিন ৫ মিনিট চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাসের উপর মনোযোগ দিন। এটা মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
২. নিয়মিত শারীরিক আন্দোলন:
রোজ ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি শুধু শরীর নয়, মনকেও সচল রাখে।
৩. গুণগত ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন:
নিয়মিত ঘুমের সময় ঠিক রাখুন এবং ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। ঘুম সুস্থ জীবনের ভিত্তি।
৪. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা:
স্পষ্ট লক্ষ্য তৈরি করে তা ছোট ছোট ধাপে ভাগ করে ফেলুন এবং নির্দিষ্ট সময়ে তা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করুন।
৫. অবিরত শেখা ও দক্ষতা অর্জন:
প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন-বই পড়ুন, কোর্স করুন, পডকাস্ট শুনুন বা নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করুন।
৬. কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন:
প্রতিদিন তিনটি বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এটি মস্তিষ্ককে ইতিবাচক চিন্তায় প্রশিক্ষিত করে।
৭. অর্থবহ সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন:
বন্ধু, পরিবার বা সহকর্মীদের সঙ্গে গভীর ও মনোযোগী যোগাযোগ গড়ে তুলুন। ফোন নামিয়ে রেখে, চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
৮. পরিবেশকে অভ্যাস বান্ধব করুন:
ভালো অভ্যাসকে সহজ এবং খারাপ অভ্যাসকে কঠিন করে তুলতে নিজের চারপাশের পরিবেশ সাজান। যেমন, স্বাস্থ্যকর খাবার সামনে রাখুন, মোবাইল অ্যাপ ব্লক করুন।
৯. ইতিবাচক আত্মকথন ও মানসিকতা:
নিজেকে উৎসাহ দিন। “আমি এটা পারি না” বলার পরিবর্তে বলুন “আমি এটা শিখছি”। এতে মস্তিষ্কের চিন্তা ধারা বদলে যায়।
১০. আর্থিক সুস্থতার অভ্যাস:
প্রথমেই নিজের সঞ্চয়ের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে ফেলুন। ঋণ দ্রুত পরিশোধ করুন ও ব্যয়ের হিসাব রাখুন।
কেস স্টাডি: চার্লসের জীবন কীভাবে বদলাল?
চার্লস অতীতে বড় পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হতেন। পরে তিনি ৫ মিনিটের একটি সহজ অভ্যাস-মাইন্ডফুলনেস-থেকে শুরু করেন। একে একে ছোট ছোট অভ্যাস যুক্ত করে তিনি ধীরে ধীরে ব্যায়াম, আর্থিক সুশৃঙ্খলা ও সম্পর্ক উন্নয়নে সফল হন। তিন বছরে ছোট অভ্যাসগুলোর যৌগিক প্রভাব তার জীবনে এক স্থায়ী পরিবর্তন এনেছে।
১% উন্নতি প্রতিদিন বড় পরিবর্তনের চেয়েও কার্যকর। অভ্যাস গঠনে সংকেত, আচরণ ও পুরস্কারের চক্র গুরুত্বপূর্ণ। ২১ দিন নয়, একটি নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে গড়ে ৬৬ দিন লাগে। পরিবেশ পরিবর্তন ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। ছোট অভ্যাস দিয়ে শুরু করুন-ধীরে ধীরে উন্নতি ঘটান। ধারাবাহিকতা অপরিহার্য; ভুল করলেও আবার শুরু করুন।
জীবন বদলানোর জন্য বড় পরিবর্তন নয়, বরং ধারাবাহিক ছোট পদক্ষেপই যথেষ্ট। প্রতিটি অভ্যাস আপনার মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও আর্থিক জীবনে একত্রে রূপান্তর ঘটাতে পারে। এই যাত্রা শুরু করুন একটি সহজ অভ্যাস দিয়ে, এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান। ভবিষ্যতের আপনি এর জন্য নিজেকেই ধন্যবাদ জানাবেন।
সূত্র: https://shorturl.at/tcpLm
মিরাজ খান