
অসহনীয় নিত্যপণ্যের দামে ক্রেতার হাঁসফাঁস অবস্থা
অসহনীয় নিত্যপণ্যের দামে ক্রেতার হাঁসফাঁস অবস্থা। গরিব মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়ছে। প্রান্তিক মানুষের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকেছে। কারণ, নিত্যপণ্যের দাম ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছেই। সাধারণ মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছে অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। হুটহাট দাম বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে ফিরছে না স্থিতিশীলতা। এ অবস্থায় উচ্চ মূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। যে হারে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে করে মানুষের খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে সরকার একটু নড়েচড়ে বসলেও সমস্যার মূল এখনো উৎপাটন হয়নি। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সরকার ডিম-আলু-পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু সরকারনির্ধারিত দামে কোথাও মিলছে না পেঁয়াজ-আলু-ডিম। বরং চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে আছে ঠিকই। কিন্তু তাদের অভিযান বেশিরভাগ যে চুনোপুঁঁটি কেন্দ্রিক তা বোঝা যায়। রীতিমতো জনগণের জীবন নিয়ে খেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রান্তিক জনগণ এক পর্যায়ে ফুঁসে উঠতে বাধ্য হবে। সাধারণ মানুষের একটাই দাবি, সোনায় মোড়ানো রাস্তা নয়, চাই সহনীয় দামে নিত্যপণ্য।
হাহাকার করছে মানুষ। তাদের কাছে প্রায়ই শুনবেন, গরুর মাংস তো দূরের কথা, মুরগির মাংসই কিনতে পারছি না। সাধারণ মানুষ এখন রয়েছে দুশ্চিন্তায়। কখন কোন্টার দাম আকাশচুম্বী হয়, সে টেনশনে থাকে প্রতিনিয়ত। আগাম কিনে মজুত করে রাখবে সেই সামর্থ্যও নেই। বাজার করার সময় শুধু চড়া দামের কারণে আমিষ-প্রোটিন-ভিটামিন জাতীয় খাবার তালিকা থেকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে। বিলাসী পণ্য তো দূরের কথা, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই এখন কিনতে পারছেন না অনেকে। আবার কোনো কোনো পণ্য এত প্রয়োজনীয়, যা না হলেও চলে না– তাও কিনতে পারছেন না।
বিষয়টি সবার কাছে পরিষ্কার। সবাই দেখতে পাচ্ছে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ভ্রƒক্ষেপ নেই ব্যবসায়ীদের। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার বাড়তি খরচের চাপ থেকে মানুষ বের হতে পারছে না। চাল, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, মাছ, মাংসের মতো পণ্যের দাম রীতিমত চড়া হয়ে উঠছে। বেড়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দৈনন্দিন ব্যয়। বর্তমান বাজার নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। মানুষের যাতায়াত খরচও বেড়েছে আগের তুলনায়। সামগ্রিকভাবে বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই এখন চাহিদার তুলনায় কম বাজার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মানুষ এখন আরও বেশি বিচারধর্মী হয়ে উঠেছে। হতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, অল্প আয় দিয়ে পুরো মাস চালানোর জন্য বিচার ক্ষমতার প্রয়োজন আছে। বাজার করতে গেলে মানুষ যেমন অন্য আট-দশটা দোকান যাচাই করে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কেও ধারণা রাখে। আন্তর্জাতিক বাজার প্রসঙ্গ বলতে গেলে তো বিশাল তুলকালাম কা- লেগে যাবে। কেননা, আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে তা বাজার সিন্ডিকেটের জন্য আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হয়ে যায়। এক ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের দোহাই দিয়ে কত কিছুর যে দাম বাড়ানো হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। মানুষকে বোকা বানানোর দিন শেষ। সবাই বুঝতে পারে পণ্যের আন্তর্জাতিক দাম, সরকারের ট্যাক্স এবং ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভের কারণেই উচ্চ মূল্যের দ্রব্যপণ্য। এগুলো বোঝার জন্য এখন আর অর্থনীতি পড়তে হয় না।
সরকার দেশের প্রভূত উন্নতি করছে, তা দৃশ্যমান। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের কথাও চিন্তা করতে হবে। সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না যে, এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই সরকারের শক্তি। আর এই শক্তির যদি প্রযতœ না হয়, তাহলে শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। চুনোপুঁটিদের না ধরে যে সব রাঘববোয়াল বাজার অস্থিতিশীল করছে, তাদের ধরতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকার যদি পরিপূর্ণভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে এই সব রাঘববোয়ালরা পুরো বাজার ব্যবস্থাকে চেটেপুটে খেয়ে ফেলবে।
সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক চাপ ও দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দরের চাপে কাতরাচ্ছে। কোনোদিকে কুল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। আশার আলোও দেখতে পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে পিষ্ট হচ্ছে রাঘববোয়ালদের অতি মুনাফার লোভের কাছে। ভুলে গেলে চলবে না, যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে সে হারে আয় বাড়ছে না মানুষের। অসাধুদের কারসাজির কারণেই এমন পরিস্থিতি। অসাধুরাও সুযোগ পেয়ে বসেছে। কারণ, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। ফলে, নানা ইস্যুতে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হচ্ছেই।
দেশে অনেক আইন আছে। সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ভোক্তার স্বার্থে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারকে পরিপূর্ণভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়াও কোন্ পণ্যের কী চাহিদা, সে অনুপাতে উৎপাদন ও আমদানির তথ্য সঠিক করতে হবে। তাছাড়া যেসব পণ্য অতি ব্যবহৃত হয়, ভোক্তার স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে সেগুলোর ভ্যাট-ট্যাক্স কমাতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক