
.
রাজধানী ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন থেক। প্রথমদিকে জোরেশোরে সচিবালয় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও এতদিনে তা চাপা পড়েছে লালফিতার দৌরাত্ম্যে। রাজধানীতে বসবাসরত মন্ত্রী-সচিবরা আর সরবেন বলেও মনে হয় না। স্বীকার করতে হবে যে, রাজধানী ঢাকা এমনিতেই লোকে লোকারণ্যÑ জনারণ্য।
জনসংখ্যার আধিক্যে ভারাক্রান্ত ও ভিড়াক্রান্ত। ঢাকার যানজট, জনজট ও জলজটের বিষয়টি বহু পুরনো ও বহুখ্যাত। এমনকি বহির্বিশ্বেও। ঢাকার লোকসংখ্যা আপাতত ২ কোটি অনুমিত হলেও সেটা যে আরও অনেক বেশি, প্রায় ৩ কোটি ছাড়িয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর ওপর প্রতিদিন কয়েক লাখ লোক যাতায়াত করে থাকেন রাজধানীতে নানা কার্যোপলক্ষে অথবা জীবিকার সন্ধানে। অনেকে থেকেও যান রুটি-রুজির আশায়। বর্তমানে ব্যতিব্যস্ত জনভারাক্রান্ত রাজধানী ঢাকা অনতিবিলম্বে বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। তা না হলে আগামীতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক)। অতঃপর রাজধানী ঢাকাকে সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে আপাতত ৫টি প্রকল্প তথা উপশহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজউক। মূলত জনঘনত্বের চাপ কমানোসহ একটি আধুনিক ডিজিটাল তথা স্মার্ট সিটি গড়ে তোলাই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
প্রথম পর্যায়ে বেছে নেওয়া হয়েছে ঢাকার অনতিদূরে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন প্রকল্প। পরে মুন্সীগঞ্জ মডেল টাউন, সাভার-আশুলিয়া-জয়বেদপুর প্রকল্প। এসব প্রকল্প হতে যাচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই, পরিবেশবান্ধব, ডিজিটাল, স্মার্ট, তদুপরি যানজট-জনজট-জলজট মুক্ত। এসব উপশহরে প্রচলিত প্লটের পরিবর্তে থাকবে ব্লকভিত্তিক বরাদ্দ ও উন্নয়ন। শিক্ষার জন্য থাকবে আলাদা অঞ্চল। হবে শতভাগ আইটি নির্ভর।
তদুপরি হবে নদীভিত্তিক ও জলাশয় কেন্দ্রিক। উল্লেখ করা আবশ্যক, রাজধানীর আশপাশের সব নদী, খাল, বিল ও জলাশয় বেদখল হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। দূষণে জর্জরিত ও মৃতপ্রায়। সরকারি খাসজমি খুঁজে পাওয়াই দুঃসাধ্য। সে জন্যই মূলত এসব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৬ সালে। বিত্তশালীদের জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে সাভার-আশুলিয়া প্রকল্প। তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদদের মতে, স্মার্ট সিটির জন্য ঢাকায় এসব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে বরং রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, যশোর, খুলনা ও চট্টগ্রামে গড়ে তোলা যেতে পারে বিশেষায়িত মডেল টাউন। সেসব স্থানে থাকবে আইটি সিটি, সিল্ক সিটি, টুরিস্ট সিটির মতো সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত উন্নত শহরাঞ্চল। যেখানে বসবাসরত মানুষ সুখ-শান্তি ও স্বস্তিতে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করতে পারবে।
ঢাকার আকাশ-বাতাস-রাস্তাঘাট জনজীবন প্রায় সবই দূষিত, পুঁতিগন্ধময়, ধূলিধূসরিত, বায়ুদূষণ- শব্দদূষণে জর্জরিত, সর্বোপরি বসবাসের অযোগ্য। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বেঁচে-বর্তে থাকার জন্য বিশুদ্ধ পানি ও নির্ভেজাল খাবার পাওয়া রাজধানীবাসীর জন্য এক আকাশকুসুম কল্পনা। বেঁচে থাকার ন্যূনতম বৈশ্বিক মানদন্ডে রাজধানী ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম ইরাক। তবে ইরাক একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত, গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশ। অন্যদিকে ঢাকা প্রায় নিরুপদ্রব রাজধানী। সেই প্রেক্ষাপটে ঢাকার অবস্থা এত খারাপ ও শোচনীয় হবে কেন? রাজধানীর বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, জলজট, জনজট ইত্যাদি দেখভাল করবে কে বা কোন কর্তৃপক্ষ? নগরবাসী সচেতন ও দায়বদ্ধ না হলে মহানগরীর সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা দুঃসাধ্য। এর পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে সর্বোচ্চ মাত্রায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।